স্বদেশ প্রেমের কবিতা, যে প্রেমের বোধ উদিত হয় স্বদেশ ত্যাগ করে মোহভঙ্গের পর, তুল্য মূল্য বিচার করে l অনেক স্বপ্ন বুকে নিয়ে যোগ্যতার নিরিখে কতো মানুষ বিদেশ গমন করেন, সেখানে তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি প্রতিষ্ঠা পান, একটু উন্নত জীবন যাপন করেন, প্রাথমিকভাবে কিছুদিন বেশ একটা সুখ, একটা পরিতৃপ্তির বোধ কাজ করে, কিন্তু পরে কোনো একটা সময় যেন মনে হয়, বিদেশে এত দূরে এসে সেভাবে কিছু প্রাপ্তি ঘটে নি, সোনার হরিণ কথাটির মধ্যেই এমন একটি ব্যঞ্জনা আছে যা বলে যা কখনোই পাওয়া সম্ভব নয়, তার পিছনে ছুটে চলা l
সোনার হরিণ - এমন নামকরণের মধ্যে দিয়ে কবি
শাহ্ সাকিরুল ইসলাম তাঁর কবিতায় যা বলতে চেয়েছেন তার আভাস দিয়েছেন l আপন বাসভূমি, আপন শহর ছেড়ে ভিন এক শহরে তিনি এসেছেন স্বপ্ন পূরণের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে, সোনার হরিণকে ধরতে l প্রথমত তিনি বহুদিন বৃথাই সোনার হরিণের পেছনে ছুটে বেড়িয়েছেন, তাকে হাতে পান নি, অর্থাৎ যে স্বপ্ন নিয়ে তিনি ভিন শহরে এসেছেন সেই স্বপ্ন পূরণ হয় নি l পরে একসময় ভ্রমবশত তাঁর মনে হয়েছে যা তিনি পেতে চেয়েছিলেন তা পেয়ে গেছেন, কিন্তু এই ভ্রম স্থায়ী হয় নি, অচিরেই তিনি সত্যি জেনে গেছেন আর সেই সত্যিটা হলো এত কাঠখড় পুড়িয়ে ভিন শহরে এসে যা তিনি পেয়েছেন তা দেশেই আপন শহরে সুলভ ছিল l
কবিতাটির মধ্যে যেন একটি বার্তা আছে, স্বদেশপ্রেমের একটা ভাবনা আছে, মিথ্যাই আমরা ভাবি নিজের দেশ, নিজের শহর, নিজের গ্রামে কোনো ভবিষ্যত নেই, বিদেশ বিভূঁইয়ে গেলে বুঝি বহুত সুখ l এই বোধের বশে অনেকেই মাতৃভূমি ছেড়ে চলে যান, তাদের অনেকেরই স্বপ্নভঙ্গ হয়, কিন্তু সোনার হরিণ ধরার প্রচেষ্টার এই জাঁতাকলে দেশ হারায় অনেক সোনার টুকরো ছেলেমেয়েদের l এটা একটা গ্রাম, একটা শহর, একটা দেশের বিরাট ক্ষতি l
এটা সত্য সব গ্রাম শহরে সমস্ত মানুষকে যথাযোগ্য ব্যবস্থা করে দেওয়ার মত পরিকাঠামো নেই l কিন্তু এটাকেই দায়ী করে সবাই যদি স্বদেশ ত্যাগ করতে থাকেন, তাহলে গ্রাম, শহর, দেশ গড়ে উঠবে কি করে ? সমস্ত বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে সকলেরই উচিত নিজের দেশ, গ্রাম শহরকে গঠন করার l
ভালো লেগেছে কবিতা এবং কবির ভাবনা, শুভেচ্ছা কবিকে l