কবিগুরু সেই কবে বলে গেছেন,
"অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে
তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে l"
ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ সহজ সরল গল্পের মধ্যে দিয়ে ধর্ম উপদেশ দান করতেন l এরকমই একটি গল্পে দেখি, এক বিষধর সাপ ব্রম্ভার অহিংসার জীবন অবলম্বন করার উপদেশে মানুষকে দংশন করা বন্ধ করে দিয়েছিল, এবং যার ফলে ছেলেপেলে সে বুড়ো হয়ে গেছে ভেবে উল্টো তাকেই ঢিল মেরে, লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে তারই জীবন সংশয় করে তুলেছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রম্ভা তাকে বলেছিলেন, তাকে দংশন করতে বারণ করা হয়েছিল, ফণা তুলতে নয় l এই পরামর্শ মেনে পরে সেই সাপ অত্যাচারী ছেলেদের উদ্দেশে যখন ফণা তুলেছিল, ছেলেরা ভয় পেয়ে পালিয়ে গিয়েছিল l গল্পটিতে দেখানো হয়েছে কিভাবে সাপটি ছেলেদের দংশন করে নি, কিন্তু ফণা তুলে নিজেকে ছেলেদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করতে পেরেছিল l
"ঘুরে দাঁড়াও" কবিতায় কবি তপন দাস ঠিক এই বার্তাটিই দিতে চেয়েছেন l যে সকল মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, নিপীড়ন সহ্য করে যায়, প্রতিবাদ করে না, কবি তাদের 'জীবন্ত লাশ' বলেছেন l গাছ যেমন শুকনো পাতাকে আঁকড়ে ধরে রাখে না তেমনই এই মানুষগুলি ধীরে ধীরে অত্যাচার সইতে সইতে সমাজ থেকে হারিয়ে যায় l কেউ তাদের মনে রাখে না l কবি তাদের প্রতিবাদ করার বার্তা দিয়েছেন l সাধারণত মনে করা হয়, যারা অত্যাচার করে, শোষণ করে, তারা খুব শক্তিশালী হয়, সাহসী হয় l কিন্তু আসলে তা নয় l মানুষ প্রতিবাদ করে না বলেই তারা অত্যাচার করার সাহস দেখায় l যখনই মানুষ সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ করেছে, এই অত্যাচারীরা ভয় পেয়ে কাপুরুষের মতো পালিয়ে গেছে, এমনটাই দেখা গেছে l আবার কবিগুরুর ভাষায় বলতে হয়,
"যার ভয়ে তুমি ভীত সে অন্যায় ভীরু তোমা চেয়ে,
যখনি জাগিবে তুমি তখনি সে পলাইবে ধেয়ে;
যখনি দাঁড়াবে তুমি সম্মুখে তাহার, তখনি সে
পথকুক্কুরের মতো সংকোচে সত্রাসে যাবে মিশে;
দেবতা বিমুখ তারে, কেহ নাহি সহায় তাহার,
মুখে করে আস্ফালন, জানে সে হীনতা আপনার
মনে মনে।"
বর্তমান রচনায় কবি মানুষকে উদ্দীপিত করেছেন অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য সাহসের সঙ্গে উঠে দাঁড়াতে l আক্রমণ নয়, কিন্তু আক্রমণের অভিনয় করে ফোঁস করে উঠতে পরামর্শ দিয়েছেন l কবি বলছেন, মানুষ এরকম করলে দেখবে তার সঙ্গে অনেক মানুষ এগিয়ে এসেছে, এবং অন্যায়কারীরা ভয় পেয়ে পালিয়ে গেছে l
সুন্দর জীবনমুখী কবিতার জন্য কবিকে জানাই অভিনন্দন !!