কবি মহাকালের কথা বলেন l কিন্তু নিজের কালকেও অস্বীকার করতে পারেন না l সমকালে সংঘটিত ঘটনা উঠে আসে কবির কলমে l আজকের দিনে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো ফনী ঝড় l কবি উম্মে আইমান মুর্শিদার সনেট কবিতা "ফনী জলোচ্ছাসের ঢেউ" রচনায় সেই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে কবির ভাবনা দুর্ভাবনা প্রকাশিত হয়েছে l
বঙ্গোপসাগরে প্রবল শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড় ফনী শুক্রবার ভারতের ওড়িশা উপকূলে ঘণ্টায় প্রায় ২০৫ কিলোমিটার গতিতে আছড়ে পড়েছে l বলা হচ্ছে ১৯৭৬ সালের পর এতদঞ্চল এতো শক্তিশালী ঝড়ের মুখোমুখি হয় নি l আশঙ্কা করা হচ্ছে এই ঝড়ের তাণ্ডবে ভারতের সমুদ্র উপকূলবর্তী তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ ধ্বংসাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে l কিছুটা দুর্বল হয়ে আজ ৪ মে (শনিবার) এই ঝড় বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে বলে জানা যাচ্ছে । তাণ্ডব চালাতে পারে দেশের উপকূলীয় ১৯টি জেলায়। ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় ভারত ও বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে নিয়ন্ত্রণকক্ষ চালু করা হয়েছে ও সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
আবহবিদেরা বলছেন এ ধরনের ঝড় বৈশ্বিক উষ্ণতা পরিবর্তনের ফল। বঙ্গোপসাগরের বায়ুমন্ডলের পরিবর্তনের কারণে এই ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতরের ঘূর্ণিঝড় পরিসংখ্যান বলছে - ১৯৬৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে মোট ৪৬টি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি ঝড়ের সৃষ্টি হয়েছিল অক্টোবর-নভেম্বর মাসে, সাতটি মে মাসে এবং ১৯৬৬ ও ১৯৭৬ সালে মাত্র দুটি ঝড় সৃষ্টি হয় এপ্রিল মাসে।
কবি ফনী ঝড়ের আগমনবার্তা শুনে আতঙ্কিত l ঝড়ের প্রবল বেগে সমুদ্রে যে জলোচ্ছ্বাস হয় তা উপকূলবর্তী অঞ্চলে আঘাত হানে l বাড়িঘর ভেঙে যায় l ঝড়ের প্রচন্ড বেগে বাড়ির ভাঙা অংশগুলো দূরদূরান্তে উড়ে যায় l তার সঙ্গে থাকে ঝড়ের প্রচন্ড শব্দ l ঘরবাড়ি, থাকার আস্তানা হারিয়ে মানুষের দুর্দশার অন্ত থাকে না l সাধারণ বেঁচে থাকা, খাওয়া পড়ার সমস্যা হয়ে যায় l শুধু মানুষ নয়, একই অবস্থা হয় প্রকৃতির সকল প্রাণীর, বনের পশু, গাছের পাখির l গাছ উপরে যায়, ডাল ভেঙে যায় l পাখির বাসাগুলো ভেঙে যায় l আশ্রয়হীন প্রাণীগুলোর কষ্টের সীমা থাকে না l বাতাসের প্রবল বেগের কারণে তার সঙ্গে উড়তে থাকে বহু জিনিস l ধুলো ওড়ে, তুলো ওড়ে, গাছের ডালপাতা ওড়ে, ওড়ে আরো কতো কিছু l পথের পাশে ছাতা মাথায় চলছিলেন এক পথিক l এই প্রবল ঝড়ে সেই ছাতাও উড়ে যায় l ঝড়ে বৃষ্টিতে সেই পথিকের নাকানি চোবানি অবস্থা l প্রবল বৃষ্টিপাতে নদী নালা সব ভরে যায় l বাড়িঘর ভেসে যায় l ভেসে যান কতো মানুষ l আচমকা এই ঝড়ে কতো মানুষ প্রাণ হারান l শুধু মানুষ নয়, প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় গাড়িঘোড়া, গরু মোষ l
প্রকৃতির এ এক আজব খেলা l যে প্রকৃতি সৃষ্টির উৎস, সেই প্রকৃতিই আবার ধ্বংসের খেলায় মেতে ওঠে l এর জন্য কাকেই বা দোষ দেয়া যায় ! মানুষ বিজ্ঞান প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়েছে l তার সুবাদে মানুষের জীবন, দৈনন্দিন বেঁচে থাকা, প্রগতি ও উন্নতির পথে এগিয়ে চলা অনেকটাই সুগম হয়েছে l কিন্তু তবু ভয়ঙ্কর সব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় মনে হয় মানুষ প্রকৃতির কাছে যেন খুবই অসহায় l আজকের দিনে এই বিপর্যয়গুলিকে রোধ করার মতো জ্ঞান ও শক্তি মানুষ অর্জন করতে পারে নি l প্রতিবিধানমূলক কিছু ব্যবস্থা, বিপর্যয় চলাকালীন উদ্ধারকার্য পরিচালনা ও আক্রান্ত মানুষগুলোর কাছে জীবনধারণের প্রাথমিক প্রয়োজনের সামগ্রী যোগানের ব্যবস্থা ও বিপর্যয়োত্তর পরিস্থিতিতিতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা - এই পর্যন্ত মানুষ করতে পারে l কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে পুরোপুরি আটকে দেবার শক্তি মানুষ অর্জন করে নি l তবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে দীর্ঘকালীন কিছু ব্যবস্থা মানুষ নিতে পারে l যেমন বৃক্ষরোপন, প্লাস্টিক বর্জন, পানীয় জলের অপচয় রোধ ইত্যাদি ইত্যাদি l প্রকৃতিদেবীর উন্মত্ততা তার ফলে হয়তো একটু কমবে l
সুন্দর প্রাসঙ্গিক রচনার জন্য কবিকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই l
##
বানানবিষয়ে কবিকে একটু যত্নবান থাকার পরামর্শ থাকলো l
সুদুরে - সুদূরে
সো সো - শোঁ শোঁ
আওয়ায - আওয়াজ
উরায়েছে - উড়ায়েছে
উরে - উড়ে
ওরে - ওড়ে
মোস - মোষ