কবি অভিষেক চক্রবর্তী ১১ মাস হলো আসরে আছেন । আজকের তারিখে দেখলাম আসরে ৫৬ টি কবিতা যোগ করেছেন । প্রায় সকল কবিতাতেই ফুটে উঠেছে মানবিকতার সুর । আত্মকথামূলক কবিতা লিখেছেন বেশ কয়েকটি । ফ্ল্যাট, গাছ, ইট, ট্রাম, রিক্সাওয়ালা, উড়ালপুল, ইট, হাওড়া সেতু, ঠেলাওয়ালা, নর্দমা বিষয়ক কবিতাগুলি প্রায় সবই আত্মকথামূলক । সকলের মুখের কথা দিয়ে কবি কতকগুলি খুব সাধারণ বিষয় ছুঁয়েছেন এবং তার মধ্যে দিয়ে উচ্চারিত হয়েছে মানবিকতার কিছু অমোঘ বিষয় ।
"একটি চায়ের ভাঁড়" রচনাটি এই শ্রেনীরই একটি কবিতা । খুব সহজ সরল ভাষায় কবি এখানে একটি চায়ের ভাঁড়ের জবানীতে মানবসমাজের এক আচরনের উল্লেখ করেছেন যা তার বৈশিষ্ট তুলে ধরেছে । যখন কোনো বিষয় প্রয়োজনীয় থাকে, মানুষ তার সমাদর করে । কিন্তু প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলেই তাকে ছুড়ে ফেলে দেয় ।
গঙ্গার পাড়ে অবহেলায় পড়ে থাকা মাটি কুমোর সযত্নে মাথায় করে ঘরে নিয়ে আসে । তার আকৃতির পরিবর্তন হয় । নবজন্ম হয় । নতুন পরিচয় জোটে । একটি চায়ের ভাঁড় এর জন্ম হয় । তখন সে আর অবহেলিত থাকে না । মানুষের কাছে তার আদর বাড়ে । মানুষের ঠোঁটের ছোঁয়া পায় সে । মানুষের ভালোবাসা পেয়ে তার এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগে । মনে শিহরণ লাগে । কিন্তু তার এই ভালো লাগার অনুভব মুহূর্তেই ভেঙে যায় । ভাঁড়ের চা শেষ হওয়ামাত্র মানুষ তা মাটিতে ছুড়ে ফেলে । আস্তাকুঁড়ে আশ্রয় হয় তার । প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলেই যে মানুষ অকৃতজ্ঞ হয়ে যায়, সম্পর্ক অস্বীকার করে - পরিত্যক্ত মাটির ভাঁড়ের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে তা কবিতাটিতে ফুটে উঠেছে ।
এই পরিত্যাগে মাটির ভাঁড়ের মন ভেঙে যায় । একদিন মানুষের মাথায় তার স্থান হয়েছিল । আজ তার স্থান মানুষের পায়ের তলায় । তার শরীর মন ভেঙে যায় । মানুষের এই দুমুখো পরিচয়ে, তার অভিনয়ে - কখনো ভালোবাসা, কখনো উপেক্ষা সে মানবজাতি সম্বন্ধে অনন্য ধারণা লাভ করে ।
কবিকে জানাই শুভকামনা ।