কবিতা এক অনুভবের প্রকাশ । কবির সংবেদনশীল মন প্রকৃতিকে পর্যবেক্ষণ করে । এই পর্যবেক্ষণ তার মনে এক ভাবের জন্ম দেয় । সেই ভাবের বিধিবদ্ধ প্রকাশই কবিতা ।
প্রকৃতির মধ্যে দেখার বিষয়ের অন্ত নেই । জীবজগতের নানান বৈচিত্র্য, প্রকৃতির নানা রূপ প্রতি মুহূর্তে কবিমনকে উদ্দীপিত করে চলে । এই উদ্দীপনা কখন কার মধ্যে সৃষ্টি হয়ে যাবে, একটি দৃশ্য কখন কবিমনকে কবিতা রচনায় প্রনোদিত করবে তা সর্বদা নির্দিষ্ট থাকে না । হঠাৎ হঠাৎই এক একটি কবিতার জন্ম হয়ে যেতে পারে । একটি অতি সাধারণ দৃশ্যও কখনো একটি কবিতার বিষয় হয়ে উঠতে পারে ।
পথেঘাটে একটি মাতাল লোকের হেঁটে যাওয়া, বিচিত্র সব কান্ডকারখানা করা - এমন দৃশ্য বিরল নয় । অনেকেই দেখে থাকবেন । এমনই একটি বিষয়কে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে কবিতার উপজীব্য করে তুলেছেন কবি বর্ষা গাঙ্গুলি তাঁর "একটা মাতাল" শীর্ষক রচনায় ।
প্রতিদিন দেখা একটি দৃশ্য, রাস্তার পার ধরে হেঁটে চলা একটা মাতাল' - কবিকে কবিতাভাবনায় প্রাণিত করে । তার নামটাও জানা হয় না । কৃতকর্মের পরিচয়েই সে পরিচিত মাতাল নামে ।
এই সাধারণ একটি দৃশ্য থেকে কবির মনে চিরন্তন কিছু প্রশ্ন জেগে ওঠে । কেন একটি সুস্থ সবল মানুষ মাতাল হয়ে ওঠেন ? জীবনের সহজ সরল সুখ আনন্দ বিসর্জন দিয়ে, আপনজনের স্নেহ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, কর্তব্যের বন্ধনের মাধুর্য থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে মদের নেশায় চুর হয়ে মানুষ কি আনন্দ পায় ? কোন্ সে ঘটনা যা তাকে এই জীবন বেছে নিতে বাধ্য করেছে ? কবি কতকগুলো সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন, যা সাধারনত একজন মানুষকে এমন অস্বাভাবিক জীবন যাপনের দিকে ঠেলে দেয় । তিনি কি প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন ? সেই দুঃখকে ভোলার জন্য অধিকতর দুঃখের এই কষ্টকর জীবনকে বেছে নিয়েছেন ? এইভাবে মদের নেশায় ডুবে থেকে তিলে তিলে নিজেকে নিঃশেষ করে দিতে চান ? প্রেমে প্রত্যাখানের বিষয়ে মানুষের সঙ্গে কোনো বাক্যালাপে যেতে চান না তিনি । নিজের অন্ধকারকে অন্যের সামনে তুলে ধরতে চান না । এতে তাঁর কষ্টও বাড়ে, অপমানের ক্ষতটিও গভীর হয় । মানুষজনকে এই সুযোগ দিতে চান না বলেই নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেন এক ভিন্ন জগতে, নেশার জগতে । নেশায় চুর হয়ে পথের এক পাশ দিয়ে হেঁটে যান । মানুষ তাঁকে এড়িয়ে চলে । মাতাল পরিচয় পাগল পরিচয় থেকে প্রিয় হয় তাঁর ।
এভাবেই প্রতিটি মাতাল তার নিজের দুঃখ কষ্ট ভুলে থাকেন নেশার ঘোরে । মানুষ শুধু তাদের দেখে যান ।
কবিকে জানাই শুভকামনা ! !