কিছু কবিতা বড়ো বেশি করে প্রকৃতির কথা বলে l প্রকৃতিকে তুলে ধরে l প্রকৃতির বর্ণন যেমন থাকে, থাকে প্রকৃতির বন্দনা l আর থাকে প্রতি মুহূর্তে পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাওয়া প্রকৃতির জন্য দীর্ঘশ্বাস l এই পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবের বহু পূর্বে অরণ্যপ্রকৃতির সৃষ্টি l সেই অরণ্যের কোলেই মানুষের জন্ম ও বেড়ে ওঠা l মানবজীবনের প্রতিটি স্তরে নানাভাবে গাছপালা উপযোগী l পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে রাখে গাছপালা l সেই গাছেরও একদিন জন্ম হয় l ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে l যেন মানুষের জীবনের মতোই শৈশব কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস আছড়ে পড়ে গাছের জীবনেও l প্রকৃতির থেকে বেড়ে ওঠার রসদ গ্রহণ করে গাছপালা প্রকৃতির অংশ হয়ে ওঠে এবং প্রকৃতিকে বাসের অনুরূপ করে তোলে l মানুষের দৈনিক বেঁচে থাকার উপাদানের যোগান দেয় l মানুষ ছাড়াও অন্য সকল পশুপাখির আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে l এছাড়া বড়ো গাছগুলি অকাতরে ছায়া বিলিয়ে ভূপ্রকৃতিকে শান্ত শীতল করে তোলে l ফুলের গাছ সুগন্ধ ছড়িয়ে দেয় চারিদিকে l
কিন্তু সেই গাছকেও নানা বিপদের সম্মুখীন হতে হয় l প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলা করতে হয় l উত্তাল ঝড়ে যেন উপড়ে যাবার মতো অবস্থা হয় l সেই বিপর্যয়ও সামলে ওঠে গাছ l কিন্তু সবথেকে বড়ো বিপদ আসে মানুষের থেকে l যন্ত্রের বলে বলীয়ান মানুষ সগর্জনে তেড়ে আসে l সমূলে উপড়ে ফেলে সমস্ত ছায়াবীথি । সেই গাছে আশ্রয় গ্রহণকারী গায়ক পাখির দল চারদিকে ছুটে পালায় l যে স্থান গাছ গাছালিতে পূর্ণ ছিল, তা ছায়াশূন্য এক মরু প্রান্তরে পরিণত হয় l সেই গাছশূন্য দ্বীপে সোনালী রোদ্দুর অবিরত ঝরে পড়ে l শুকনো পাতার মর্মরধ্বনি শোনা যায় না l কেবলই বিবর্ণ ধূলিঝড় উড়ে বেড়ায় l
বেপরোয়াভাবে অরণ্য ধ্বংস প্রকৃতিকে কোন্ জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে "এখানে বিবর্ণ ধূলিঝড়" রচনায় তার একটি আভাস দিয়েছেন কবি মনোয়ারুল আলম l কবিকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা l