এই পৃথিবীতে জীবন যেমন সত্য, তেমনই সত্য মৃত্যু l এই দুই সত্যকে মেনে নিয়েই মানুষের জীবনধারণ l জীবনভর মানুষের কতো কতো চাওয়া থাকে l তার কিছুটা পূরণ হয় l আবার অপূর্ণও থাকে কিছু l যদিও ব্যক্তিভেদে চাওয়া পাওয়ার তারতম্য থাকে l পাওয়ার সন্তোষ এবং না পাওয়ার বেদনা নিয়েই তাকে জীবনের পথে চলতে হয় l তারপর একদিন তাকে এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এর বাঁধন ছিঁড়ে মহাশূন্যে মিলিয়ে যেতে হয় l এ এক চিরকালীন নিয়ম l সকলের ক্ষেত্রেই এক l কোনো ব্যতিক্রম নেই l একক ব্যক্তির বিদায় হলেও বাকি পৃথিবী তার নিজের নিয়মে চলতে থাকে l তিক্ত নিক্তিমালার কঠোর-কঠিন-বাস্তব-ব্যঞ্জনায় মানুষ ডুবে যায় l ধীরে ধীরে ভুলে যায় বিদায় নেয়া মানুষটিকে l এই সত্য অনুভব করেও বিদায়ী আত্মার কোনো ক্ষোভ, বেদনাবোধ হয় না l তখন সে নিজের জন্য সব চাওয়া পাওয়ার ঊর্ধ্বে পৌঁছে যায় l তখন তার কামনা থাকে শুধু অপরের মঙ্গল l সর্ব মঙ্গল্যে ভরুক এই বিশ্ব-ভুবন, এই প্রার্থনা করে যায় সে l
"শেষ অভিপ্রায়" রচনায় কবি অনুপম মণ্ডল জীবনের পথ অতিক্রম করে মহাশূন্যের পথে মিলিয়ে যাওয়ার প্রাকমুহুর্তে ব্যক্তির এমন কামনাকেই ব্যক্ত করেছেন l
যখন একজন মানুষ বুঝতে পারেন তার যাবার সময় হয়েছে, তার চাওয়াগুলো আর ব্যক্তিগত থাকে না l তখন এই পৃথিবীর সমগ্র মানুষের কল্যাণ তার প্রার্থিত হয় l পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে যেতে সে এই ধরণীতলকে সুন্দর, হরেক রাঙা ফুলে সুশোভিত দেখে যেতে চায় l তার কামনায় থাকে - গোধূলিবেলায় মাঠে গরুর পাল ধূলো উড়িয়ে চলেছে, রাতের আকাশ ঝলমল তারার আলোতে ছেয়ে আছে, কূজনরত পাখির কলকাকলিতে বিশ্ব মেতে রয়েছে, মাঠে মাঠে সোনালী ফসল ফলে রয়েছে, জাতপাতহীন বসুন্ধরা যেন জেগে উঠেছে পূরবী গীতে!
হিংসা, দ্বেষ, দ্রোহ ভুলে সব মানুষ যেন প্রকৃত অর্থেই মানুষ হয়ে উঠেছে - বিদায়বেলায় এই দৃশ্য দেখে যেতে চায় সে l
বিশ্বপিতা সবার এক l এটাই মানুষের পরিচয় !
কবিকে জানাই শুভকামনা !!