গ্রীষ্মের দাবদাহে বৃষ্টির কামনা সবার l সেই কামনাই ফুটে উঠেছে কবি কাজী এনামুল হক এর 'বৃষ্টি' রচনায় l বৃষ্টি এখানে শুধু খরতাপে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা হয়ে থাকে নি, বিরহী প্রেমিকের মিলন ইচ্ছাকেউ প্রকাশ করেছে l
প্রচন্ড গরমে যখন মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, তখন এক পশলা বৃষ্টি এসে সেই কষ্ট অনেকটাই লাঘব করে দেয় l সেই বৃষ্টিতে ভিজে গাছ, পথঘাট শীতলতা অনুভব করে l তাপপীড়িত মানুষ বৃষ্টিতে ভিজে শীতল হয় l প্রচন্ড দাবদাহের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে মানুষের দেহ মন শান্ত হয় l প্রাণে এক প্রশান্ত অনুভব জাগে l ঠিক যেমন বিরহী প্রেমিক দীর্ঘদিন ধরে বিরহের জ্বালায় জ্বলতে জ্বলতে, প্রিয়তমার সঙ্গে মিলিত হয়ে দৈহিক ও মানসিক শান্তি পায় l যেমন প্রিয়তমাকে, এসময় তেমন বৃষ্টিকেও খুব আপন বলে মনে হয় l তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতায় কোনো লজ্জা থাকে না l আভরণ পোশাক ত্যাগ করে তার সঙ্গে মিলিত হয়ে দেহ ও মনের তৃষ্ণা নিবারণ হয় l প্রকৃতির কোলে এই মিলন যেন যুগ যুগের রহস্যকে উন্মোচন করে l কি আদিম যুগে, কি বর্তমান যুগে, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের, নরের সঙ্গে নারীর এই সম্পর্ক চিরন্তন l আদিমতার সূত্রেই মানুষ এই সম্পর্কে বারে বারে জুড়ে যায় l বৃষ্টি একটি উপমা মাত্র l খরতাপে বৃষ্টির কামনা ও বৃষ্টিতে ভিজে স্নান এখানে বিরহী প্রেমিকের প্রিয়ার সঙ্গে মিলনের তীব্রতাকেই প্রকাশ করছে l বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ বিরহী প্রেমিকের রূপক l বৃষ্টি প্রিয়তমার রূপক l চারিদিকের আগুন হাওয়া, শুকনো ঠোঁট, বুক, হৃদয়ের অতল সব প্রিয়তমার সঙ্গে মিলনের প্রবল তৃষ্ণার রূপক l প্রেমিক আশায় থাকেন তাঁর প্রিয়ার আগমনের l তার সঙ্গে মিলিত হয়ে নিজের প্রেম তৃষ্ণা মিটিয়ে নিতে চান, যেমন করে গ্রীষ্মের দাবদাহে ক্লিষ্ট পৃথিবী শীতল জলধারায় স্নাত হবার অপেক্ষা করে থাকে l
কবিকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা l