জীবন ও মৃত্যু এক অমোঘ সত্য । আগমন ও প্রস্থান - এক অনন্ত পরিক্রমা । সকল জীব এই একই ডোরে বাঁধা । আগমনে যেমন আনন্দ, উচ্ছ্বাস, বিদায়বেলায় তেমনই বেদনা ও আপন হারানোর দুঃখ । তবু তার মধ্যে থাকে সত্যকে মেনে নেবার দৃঢ়তা । যা নিত্য, প্রবহমান - তার অনুসারী করে নিজেকে প্রবোধ দেবার প্রয়াস ।
জীবন অতিবাহিত করার পর প্রবীণের যেমন আসে বিদায়বেলা, তেমনই তার হাত ধরে আসে নবীন । প্রবীণের বিদায়ে যেমন বিশ্বপ্রকৃতি ভারাক্রান্ত, তেমনই নতুনের আগমনে সে উচ্ছ্বসিত । নতুন তার চঞ্চলতা, সপ্রতিভতা দিয়ে প্রবীণকেও সাময়িকভাবে সতেজ করে তোলে । তাঁর জীবনেও নতুন করে বাঁচার আনন্দ সঞ্চার করে । নিজের বিদায়ের সত্য জেনেও তরুনের মধ্যে বেঁচে থাকার, তার সঙ্গে জীবন অনুভব করার, তার চোখে নতুন করে বিশ্ব দেখার শক্তি পেয়ে যান প্রবীণেরা ।
কবি শফিকুল ইসলাম বাদল "বদলে দিয়েছো" রচনায় এমনই এক প্রবীণের জীবন অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন যাঁর জীবনযাপন, পথচলা বদলে গিয়েছে এক নবীনের সংস্পর্শে । জীবন সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিরও বদল হয়েছে । বয়সের ভারে যে পৃথিবী সম্বন্ধে তাঁর উৎসাহ আকর্ষণে ভাটা পড়েছিল, নবীনের সংস্পর্শে, তার উৎসাহে প্রভাবিত, অনুপ্রানিত হয়ে তাঁরও দৃষ্টিভঙ্গির চারুকলার পরিবর্তন হয়েছে । নতুন আলোয় নতুন পৃথিবীকে তিনি দেখছেন পরম মুগ্ধতায় । পৃথিবীকে ভালো লাগার যে চিরকালীন উপাদানগুলি, যেগুলির প্রতি তিনি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছিলেন, সেগুলি নতুন করে তাঁকে আকৃষ্ট করছে । প্রেমের এমনই শক্তি । নবাগত তরুনের প্রতি তাঁর ভালোবাসা সঞ্চারিত হয়েছে নবীনের ভালোলাগা বিষয়গুলির প্রতি । চাঁদের আলোর নরম পেলব স্নিগ্ধতা তাঁর হৃদয় স্পর্শ করছে । সন্ধ্যাকাশের সন্ধ্যাতারা, রাতশেষের শুকতারা তাঁর মনকে নতুন রক্তরাগে রাঙিয়ে তুলেছে । এমন অনুভব আগে কখনো তিনি পেয়েছিলেন কি না, তাও তিনি বিস্মৃত হয়েছেন । যেন নতুন আনন্দের অনুভব পাচ্ছেন এমনটা মনে হচ্ছে ।
তিনি জানেন তাঁর যথেষ্ট বয়স হয়েছে । এই পৃথিবীকে বিদায় দেবার সময় এসেছে । তাঁর জীবনসূর্য ডোবার পথে । একই সঙ্গে এক নবীনের আবির্ভাব হয়েছে । তার সামনে পড়ে রয়েছে গোটা জীবন । বিজয়রথে চড়ে তার যাত্রা শুরু হয়েছে । প্রবীণের আকাশে যখন অন্ধকার নেমে এসেছে, বয়সজনিত নানান রোগব্যাধি অমানিশার রাহু গ্রাস করেছে তাঁর বেঁচে থাকার আনন্দ, তখন তিনি দেখছেন নবাগত তরুণের ঝলমলে আকাশ । সেখানে জোছনার আলো ঝরে, চাঁদ হাসে ।
প্রবীণ এবং নবীন একই পৃথিবীতে একইসঙ্গে অবস্থান করছে । কিন্তু তাদের অবস্থান দুই মেরুতে । একজন জীবনের সব রূপ রস ভোগ করে তার প্রতি উৎসাহ হারিয়ে বিদায়ের পথে । আরেকজনের কাছে পৃথিবীর সকল রূপ সৌন্দর্য রহস্য হয়ে আছে । তার অনুভব, তার উন্মোচনে সে সদা উদগ্রীব । সদা চঞ্চল । কিন্তু পারস্পরিক ভালোবাসার সম্পর্ক তাদের এক অমোঘ আকর্ষণে বেঁধে দিয়েছে । প্রানের সঙ্গে প্রাণ ভালোবাসার সম্পর্কে জুড়ে গিয়েছে । একের ভালোবাসা অন্যের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে । যে প্রবীণ জীবন সম্বন্ধে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিলেন, নবীনের সংস্পর্শে তাঁর মনে আশার আলো সঞ্চারিত হয়েছে । ভালোবাসার এই সম্পর্কে আবদ্ধ থেকে জীবনকে নতুন করে উপভোগ করতে চান তিনি । ভালোবাসার প্রতি অনুরাগবশত এটাই তাঁর প্রার্থনা ।
ভালো রচনার জন্য কবিকে জানাই শুভকামনা ।