কবি কবিতা লিখে যান । কখনও সেই কবিতা শিল্পের জন্য, কখনও মানুষের জন্য । কিন্তু কবি কবিতা লেখেন তাঁর নিজের জন্য, নিজের তাগিদে । সৃষ্টিযন্ত্রণার থেকে কবিতা সৃষ্টি হয় ।

সেই কবিতা যখন মানুষকে স্পর্শ করে, মানুষ কবির প্রশংসা করেন । অনেক অনেক মানুষ কবিকে আপনত্বের বোধে জড়িয়ে ধরেন । এই আপনত্ব, মানুষের এই অতি সান্নিধ্য একটা পর্বে কবির কাছেও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় ।

কবির যে সকল সৃষ্টি সরাসরি সেইভাবে মানুষের কথা বলে না, শুধু শিল্পের জন্যই কবি রচনা করে যান, মানুষের দুঃখ বেদনা সংগ্রামের জীবন থেকে অনেক অনেক দূরে কবিকল্পনা বিরাজ করে এক অলৌকিক সৌন্দর্য্যের মায়াভূমে, জীবনমুখী কবিতার ভক্ত একদল মানুষের কাছে কবি অপ্রিয় হয়ে ওঠেন । তাঁরা কবিকে তাঁদের আপন ভাবতে পারেন না । তাঁদের কথায়, আচরণে, প্রতিক্রিয়ায় কবির প্রতি বিরাগ প্রকাশ পায় । এই বিরাগও কবির কাছে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় ।

কবি তাঁর নিজের অনুভব প্রকাশ করেন কবিতায় । কোনো ফরমায়েশি লেখা নয়, মৌলিক সৃষ্টির আবেগ যখন তাঁকে ঘিরে ধরে, স্বতঃস্ফূর্তভাবেই কবিতা রচনা করে যান তিনি । মানুষের সান্নিধ্য বা ভালোবাসা অথবা মানুষের থেকে দূরত্ব ও বিরাগ কোনোটিই তাঁর প্রার্থিত নয় । তিনি থাকতে চান তাঁর নিজের মতো করে । আপনার মধ্যে বিচরণ করতে চান তিনি । এতেই স্বস্তি তাঁর ।

স্বগতোক্তির মতো কথাগুলি বলে যান তিনি । আপন মনে আপনার মধ্যে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেন । প্রিয়জনের কাছে এবং যাঁরা তাঁকে পছন্দ করেন না তাঁদের কাছেও কবি এই নিবেদন করেন । বারে বারে তাঁর এই নিবেদন তিনি প্রকাশ করে যান ।

কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা "আপন মনে" যেন চিরাচরিত সেই বিতর্ক -  কবিতা শিল্পের জন্য, নাকি মানুষের জন্য লেখা উচিত - তার উত্তর রেখে যায় । কবিরা মূলত নিভৃতচারি । এই একক যাপন কবিদের থেকে কেড়ে নেয়া যায় না ।