প্রেম এক আজব রসায়ন । অদ্ভুত সম্পর্ক । কখনো গভীরতা । কখনো শীতলতা । প্রচুর প্রচুর প্রতিশ্রুতি । এবং প্রচুর প্রচুর বিস্মৃতি । কাছে থাকলে একরকম । দূরে গেলে অন্যরকম । বিচ্ছেদে সম্পর্ক গভীরতা পায়, আবার কখনো সম্পর্ক যায় হারিয়ে । যতক্ষন শরীরে প্রেমের আগুণ কাজ করে যায় ততক্ষন প্রেমের রসায়ন একভাবে কাজ করে যায় । শরীরের আগুণ যখন নিভে যায়, তখনও প্রেম থাকে, কিন্তু তার চরিত্র যায় বদলে । প্রেমে থাকে অনেক অভিনয় । দুঃখের অভিনয়, সুখের অভিনয় । থাকে প্রচুর অতিকথন, কখনো মিথ্যা কথন । তার মধ্যে দিয়েও প্রেম এগিয়ে যায় । জীবনসন্ধ্যায় পরস্পর নির্ভরতা প্রেমকে অন্য এক মাত্রা দিয়ে পরস্পরের কাছে অপরিহার্য করে তোলে ।
কবি মোঃ সাইফুল ইসলাম 'উত্তর' শীর্ষক রচনায় বহুমাত্রিক এই প্রেমকে কলমের আঁচড়ে আকারে ইঙ্গিতে ছুঁতে চেয়েছেন । দু'জন প্রেমের মানুষ যখন একসঙ্গে থাকে, প্রেমের নতুন অবস্থায় তাদের মধ্যে প্রচুর কথা হয় । অর্থের কথা । অনর্থের কথা । শরীর কথা বলে ওঠে । তারপর যে কোনো কাজেই হোক, তাদের দূরে যেতে হয় । প্রতিশ্রুতি থাকে, প্রচুর চিঠি দিবে তারা । পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে পত্রের মাধ্যমে । কিছুদিন চলেও । তারপর নানা কাজের চাপে, অন্য নানা ভাবনার ভিড়ে সেটা সম্ভব হয়ে ওঠে না । নিজেদের ভুলো মনের দোহাই দিয়ে প্রেমকে প্রবোধ দিতে হয় । সান্ত্বনা দিয়ে প্রেমকে বাঁচিয়ে চলতে হয় ।
চোখের বাহির, মনের বাহির - এই নীতি কাজ করে যায় প্রেমসম্পর্কের ক্ষেত্রেও । যখন সকাল সাঁঝে সর্বদা একসঙ্গে পাশাপাশি থাকা, তখন একরকম । তখন সব ভাবনা পরস্পরকে কেন্দ্র করে আবর্তিত । কিন্তু যখন কর্মসূত্রে বা অন্য কারণে দূরে থাকা, অন্য নানা ভাবনার ভিড়ে প্রিয়ার ভাবনাও মিশে যায় । একটি ভাবনা হিসাবেই থাকে । বিশেষ কিছু নয় ।
তারপরে থাকে প্রেমের শরীরী আকর্ষণের ক্রমহ্রাসমান উপযোগিতার প্রশ্ন । শরীরের আগুণ ক্রমে ফুরিয়ে যেতে থাকে । নীল ভোমরা দুর্বল হয় । কিন্তু মনের বাঁধন দৃঢ় হয় ।
আকর্ষণ থাকে । যদিও তার চরিত্র যায় পাল্টে । নীল আকাশে সন্ধ্যাবেলায় পাখিযুগল যেমন পরস্পরের সহায় হয়ে পাশাপাশি উড়তে থাকে, ঠিক তেমনই বার্ধক্য যখন গ্রাস করে মানুষকে, তখন পরস্পরের ওপর নির্ভরতা শতগুণ বেড়ে গিয়ে প্রেমকে নতুন মাত্রা দেয় । জগতের অন্য সব দায় দায়িত্ব সরে গিয়ে পরস্পরকে তারা অনেকটাই কাছে পায় । মনে কিছু জ্বালা থাকে । পুরনো উপেক্ষার কিছু স্মৃতি মনকে পোড়ায় । কিন্তু সে সব কিছুকে অতিক্রম করে শেষবয়সে প্রেম তার নিজের মতো করে পরস্পরের প্রতি নিবেদিত হয় ।
এইভাবেই একেকটা দিন একেকটা রাত অতিবাহিত হয়ে চলে । কখনো দুষ্টুমি, কখনো ছেলেমানুষী, কখনো শখের দুঃখযাপন, কখনো সুখেই কেঁদে ওঠা - তার বিচিত্র অনুভবে জীবন পার হয়ে যায় । যে উত্তরগুলি অতীতে দেয়া হয় নি, তাও দেয়া হয় বারে বারে ।
ফাগুন যায়, কথার স্রোত কমে, সেই স্মৃতিগুলোই যেন ঋন হয়ে বেঁচে থাকে সম্পর্কের মধ্যে । কখনো কিছু অতীত যাপন স্মৃতির বিচারে ছেলেমানুষী বলে মনে হয় । কিন্তু শেষ বয়সে সেগুলোই পরম অবলম্বন হয়ে টিকে থাকে ।
কবিকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা ! !