কবিতা জুড়ে একুশের জয়গান । এই একুশ তারিখের নয়, বয়সের । একুশ বছর বয়সে কাঁধে পড়ে অনেক দায়িত্বের ভার । সেই দায়িত্ব নিয়ে প্রিয় মানুষজনদের ছেড়ে পথে বেরিয়ে পড়তে হয় । যেতে হয় দূর দেশে । নিজেকে গড়ে তুলতে হয় নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, দেশ ও সমাজের জন্য । তার জন্য ভালোবাসার মানুষদের থেকে সাময়িক বিরহ সহ্য করতে হয় ।
কবি ইউসুফ মানসুর এমনই সব ভাবনা নিয়ে রচনা করেছেন "আমরা ২১" । দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে মানুষকে একাই পথে বেরিয়ে পড়তে হয় । হৃদয়ে অনেক ব্যথা লাগে । কিন্তু সেটা সহ্য করেই সামনের পথে এগিয়ে চলতে হয় । চলার পথে কতো মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় । তাদের সঙ্গে ভালোবাসার বাঁধনে জড়িয়ে থাকে মানুষ । কিন্তু যখন আসে বিপ্লবের আহ্বান, কর্তব্যের দায়, তখন সেই আপনার জনদের ছেড়ে দিয়েই বেরিয়ে পড়তে হয় । সাময়িকভাবে সেই ভালোবাসাগুলোকে যেন কবর দিতে হয় । মনে কষ্ট হয় । দুঃখ হয় । সেগুলো সহ্য করে কর্তব্য করে যেতে হয় । মনে স্বপ্ন থাকে লক্ষ্য অর্জনের পর আবার প্রিয়জনদের সাথে মিলিত হওয়া যাবে । এই স্বপ্ন বুকে বেঁধে দিনপাত করে যেতে হয় । ব্যথা উভয় দিকেই থাকে । যে বোনকে ছেড়ে আসা হয়েছে, যে বধূকে ছেড়ে আসা হয়েছে - প্রতি মুহূর্তে তারা মনের মধ্যে থাকে ও মনকে নাড়া দিয়ে যায় ও মনকে ব্যথিত করে ।
একটা সুন্দর শান্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে বাড়ি থেকে দূরে যেতে হয় অনেক মানুষকে । আলোকিত ভোরের প্রত্যাশায় পথে পথে ঘুরে বেড়াতে হয় । দিন যায় । মাস পেরোয় । মায়ের সঙ্গে দেখা হয় না । মনের অনেক ছোট বড়ো চাওয়া পাওয়াকে বিসর্জন দিতে হয় । বাড়িতে মা সন্তানের ভাবনায় নিয়োজিত থাকেন । কেবল ভাবেন কবে তাঁর সন্তান বাড়ি ফিরবে ! কবে আবার তিনি তাঁর সন্তানের মুখ দেখতে পাবেন । এই বিরহ অল্প দিনের জন্য নয় । বহু বহু দিন ধরে সন্তান বিদেশে । মায়ের মন উতলা হয়ে থাকে । তিনি পথের পানে চেয়ে থাকেন, যে পথ ধরে একদিন তাঁর সন্তান ঘরে ফিরবে ।
হাতে হাত রেখে শান্ত-সুখের সমাজ গড়ার দৃপ্ত শপথ নিয়ে সমস্ত একুশেরা আজ পথে । এই শপথে তারা অটল । জীবন দেয়ার জন্যও প্রস্তুত । হয় লক্ষ্য অর্জন করবে, নতুবা মৃত্যু বরণ করবে । মাঝপথে ফিরে আসবে না ।
কবিকে জানাই অভিনন্দন !