ইংরেজি ভাষায় একটি কথা আছে "Death is a great leveller". মৃত্যু সব কিছু সমান করে দিয়ে যায় l অর্থাৎ কেউ মারা গেলে তার আর আমরা দোষ ত্রুটি খুজি না l তার সম্বন্ধে বলতে হলে শুধু ভালোটুকুই বলি l সেই মৃত ব্যক্তির যে বিষয়গুলিকে এতদিন নিন্দা সমালোচনা করে এসেছি, সেই বিষয়গুলিকে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করি l তার মধ্যেই ভালো অনেককিছু খুঁজে পাই l এটা একটা দিক l আর একটা দিক হচ্ছে মানুষ যতক্ষণ বেঁচে থাকে, লড়তেই থাকে, মরে গেলেই লড়াইয়ের শেষ l তখন শুধুই শান্তি l
কবি শরীফ তমাল "আমি মৃত হলে" রচনায় মোটামুটি এরকম ভাবনা দ্বারা চালিত হয়েছেন বলে মনে হয় l তিনি জানেন তিনি যতোদিন বেঁচে আছেন, তাঁর স্বরূপে তাঁকে কেউ পছন্দ করেন, কেউ করেন না l এর মধ্যে আত্মীয় পরিজন, বন্ধু বান্ধব সহকর্মী সকলেই আছেন l দোষত্রুটি মিলেই মানুষ l কিন্তু ব্যক্তিভেদে কোথাও গুণ কোথাও দোষ বড়ো হয়ে ধরা দেয় l চারিদিকে কবি এই অপছন্দের বিষয়টি বেশি করে দেখতে পান l সবাই পরস্পরের সম্বন্ধে যেন অসন্তোষ পুষে রেখেছেন l কিন্তু কবি ভেবে দেখেছেন, তিনি যদি অকস্মাৎ মারা যান, তাহলে এই চিত্রটি সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে l
তখন আর দোষ নয়, গুণগুলি প্রকট হবে l সবাই নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করবে l নিজেদের পরস্পরের প্রতি এবং মৃত মানুষের প্রতি l মুখ দিয়ে যেন প্রেম ভালোবাসার কবিতা বেরুবে যে কবিতা এতদিন সে ভুলে ছিলো l
পৃথিবীতে তখন যতো ভালো মানুষ আছেন, মন্দ মানুষ আছেন, তাঁদের চোখ থেকে বেদনার অশ্রু ঝরে পড়বে l কান্নায় ভেঙে পড়বেন তাঁরা, এতটাই শোকাহত l মনের সমস্ত সংশয় সন্দেহ দূর হয়ে এতদিন যে বিষয়গুলিকে ভুল বলে মেনেছিলেন, সেগুলিকে মনকাড়া আকর্ষণীয় ভালো বিষয় বলে ঘোষণা করবেন l
মৃত্যুভাবনায় নিজের সন্তানসন্ততি, যাদের ছেড়ে তাঁকে চলে যেতে হবে, তাঁদের প্রতি গভীর ভালোবাসা স্নেহ অনুভব করেন কবি l তাঁর মনে হয় মৃত্যুর পরেও নিজের সন্তান সন্ততিদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা কমে যাবে না l তাঁর দেহের বিনাশ হতে পারে, কিন্তু অন্তর থেকে তিনি তাদের ভালোবেসে যাবেন, পদ্মাপারে, মেঘনার চরে তাঁর অশরীরী আত্মা ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ সন্তানসম মানুষদের ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাবে, তাঁদের গায়ে হাতে স্নেহের পরশ বুলিয়ে তাঁর মনে হবে যেন তাঁর মৃত্যুটা সার্থক হয়ে গেছে গেছে l
কবিকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা !!