মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক পৃথিবীর পবিত্রতম সম্পর্কের অন্যতম l মায়ের চোখে তাঁর সন্তান চিরটা কাল সেই ছোট্ট খোকাই থেকে যায় l শিশুকালে মায়ের ওপর শিশুর যে নির্ভরতা থাকে, সর্বদা মায়ের কোলে কোলে থাকা, মায়ের আদর অনুভব করা, মায়ের হাতে খাওয়া, বাইরে কোথাও গেলে সর্বদা মায়ের সঙ্গেই যাওয়া, আরো নানাভাবে নানা কাজে মায়ের সাহচর্য থাকে - বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে এই নির্ভরতা কমতে থাকে l সন্তান যখন বড়ো হয়ে ওঠে, স্বাবলম্বী হয়, সব কাজ নিজেই করতে শেখে, তখনো মায়ের সতর্ক দৃষ্টি থাকে তার প্রতি l "আজো মায়ের খোকা" কবিতায় কবি মো: আশিকুর রহমান সন্তানের প্রতি মায়ের এই সদা জাগ্রত স্নেহশীল রূপটি তুলে ধরেছেন l সন্তান বড়ো হয়ে যায় l কিন্তু তাকে নিয়ে মায়ের ভাবনা, দুশ্চিন্তা শেষ হয় না l সর্বদা সন্তানের মঙ্গলচিন্তা তাঁকে আচ্ছন্ন করে রাখে l হাতে পায়ে বড়ো হয়ে ওঠা সন্তানকে তিনি তাঁর ছোট্ট খোকা জ্ঞানেই বিবেচনা করেন l তাকে কোলে তুলে নেন না ঠিকই, কিন্তু পরম স্নেহে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন l বড়ো হয়ে ওঠা ছেলেকে নিজের হাতে খাইয়ে দেন না, কিন্তু সে যখন খেতে বসে, খাওয়ার টেবিলে সর্বদা তাকে সঙ্গ দেন l মায়ের এই স্নেহ, ভালবাসা সন্তানের হৃদয় স্পর্শ করে l সে যেন আবার মায়ের সেই ছোট্ট খোকা হতে চায় l শিশুকালে মা সন্তানকে একলা বাইরে যেতে দেন না l কিন্তু সন্তান বড়ো হয়ে উঠলে তাকে নানা কাজে ঘর ছেড়ে বাইরে যেতে হয় এবং একলাই যেতে হয় l সেক্ষেত্রে মা ছেলের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করেন এবং পথেঘাটে সে যেন দেখেশুনে চলে তার জন্য তাকে অযাচিত উপদেশ, পরামর্শ প্রদান করেন l যতক্ষণ সন্তান বাইরের কাজ সেরে নিরাপদে ঘরে ফিরে না আসছে, ততক্ষণ তিনি নিশ্চিন্ত হন না l মনের মধ্যে একটা অনিষ্ট আশঙ্কা কাজ করে যায় l মনটা ফাঁকা ফাঁকা হয়ে যায় l
পৃথিবীর সব মায়েরাই এরকম l কবিতায় কবি পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা, ভালবাসা নিবেদন করেছেন l মা চিরকাল বেঁচে থাকেন না l বয়সের ভারে একদিন তাঁকেও এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয় l সেদিন একজন সন্তান তার সর্বাধিক মূল্যবান মানুষটিকে হারায় l এই আঘাত সয়ে ওঠা সন্তানের জন্য খুব কঠিন হয় l
মায়ের সঙ্গ সন্তানের কাছে আশীর্বাদের মতো, তার পরম আশ্রয়ের স্থল l পৃথিবীর কোনো সন্তান যেন শিশুকালে মাতৃহারা না হন, বিধাতার কাছে এই মিনতি করেন কবি l
কবিতাটি বিষয়গৌরবে যতো উজ্জ্বল, গঠনগত দিক থেকে ততটা নয় l বিভিন্ন পঙক্তিতে পাঠ স্বাচ্ছন্দ্য বিঘ্নিত হয় l বারবার সরব পাঠ করলে কবি এই অসঙ্গতি বুঝতে পারবেন এবং কিছু শব্দের রদবদল করে ছন্দ তালে সমতা এনে এই অসঙ্গতি দূর করতে পারলে রচনাটি সুন্দর হয়ে উঠবে l
কবিকে জানাই শুভকামনা !!
* যেনো - যেন