"বেশ কিছুদিন পরে" রচনায় কবি কালকেতু (দুর্জয় কবি) মানুষের সহজাত কাব্যপ্রেমের কথা বলেছেন তাঁর নিজের মতো করে l
আধুনিক ব্যস্ত জীবনে জীবিকার সংস্থান করতেই কতো সময় চলে যায় l সকাল থেকে শুরু হয়ে রাত্রি পর্যন্ত প্রথমে বেঁচে থাকার জন্য অর্থ সংগ্রহ, তারপর সেই অর্থ দিয়ে বেঁচে থাকার রসদ ক্রয় এবং সবশেষে সেই রসদকে ভোগের উপযোগী করে প্রস্তুতকরণ এবং ভোগ l তার ওপর সামাজিক নানা দায়িত্ব, কর্তব্য এবং আরো কতো কিছু l এই সব কিছুর মাঝে কাব্যচর্চা এবং কাব্যের রস আস্বাদন করার সময় বাঁচে কম l কিন্তু সেটা না করলে তো মানবজীবন সার্থক হয় না l কারণ মানবসত্ত্বার মধ্যেই কবিতা আছে, কাব্য কবিতা অনুভব ও সৃষ্টির সহজাত ক্ষমতা আছে l জেনেটিক্যালিই আছে। মানুষের মধ্যে যে কল্পনা এটি সহজাত ভাবনা। কেউ লিখতে শুরু করে, কেউ লিখে না। কিন্তু কবিতার কাছে যাবার জন্য ইচ্ছা জাগ্রত থাকে এবং কাজের ফাঁকে ফাঁকে সেখানে উঁকি মারা চলে l কিন্তু তাতে করে মনের পুরো তৃপ্তি মেলে না l এদিকে জীবনের দায়কেও অস্বীকার করা যায় না l তার জন্য কর্মব্যস্ততাকে স্বীকার করে নিতে হয় l যদিও মনের মধ্যে সর্বদা এই ব্যস্ত কর্মজীবনের শেষে কবিতায় ফেরার জন্য কামনা থাকে l এই বিশ্ব সংসারে একজন একক ব্যক্তি অতি ক্ষুদ্র l সে নিমিত্ত মাত্র l বিশ্ব প্রকৃতির বিধান অনুসারে তাকে চলতে হয়, তার কর্তব্য করে যেতে হয় l নিজের এবং আশ্রিতজনের ক্ষুধা তৃষ্ণা নিবারণের দায়িত্ব যার কাঁধে, তাকে অহোরাত্র পরিশ্রম করে যেতেই হয় l ফলে যা তার সহজাত চাওয়া, কাব্যরস আস্বাদন, তার থেকে সে বঞ্চিত হয় l কাব্যরসবঞ্চিত এই জীবনকে কখনো কখনো বিষাক্ত বলে মনে হয় l
মন চঞ্চল থাকে কবিতার কাছে ফিরে যাবার জন্য l যখনই অবসর মেলে মানবমন কাব্য কবিতার জগতে ফিরে যায় l কেউ সৃষ্টিশীল কর্মে নিয়োজিত হন l কাব্য সৃষ্টি করেন l যিনি তা করেন না, তিনিও কবিতার কাছে যান, কবিতা পাঠ করেন l তাঁর নিজের ভাবনার সঙ্গে কবিতার ভাবনা মিলিয়ে দেখেন, কানেক্ট করেন, সংযোগ স্থাপন করেন। এই সংযোগ ঘটানোই কবিতার সার্থকতা।
যেভাবেই হোক, একজন সৃষ্টিশীল কবি হিসাবে বা একজন প্রকৃত কবিতা পাঠক হিসাবে তিনি যখন নিজেকে রসসিক্ত করে তুলতে সক্ষম হন, তখনই তিনি নিজের জীবনের সার্থকতা খুঁজে পান l
সুন্দর রচনার জন্য কবিকে জানাই অভিনন্দন l
***
তিষ্ণার্ত - তৃষ্ণার্ত
বিসাক্ত - বিষাক্ত