অন্নপূর্ণা নামটি ছিল আমার দিদিমার
অন্নে পূর্ণ থাকত না তার ঘর সংসার l
বিবাহিত দুই কন্যা আসত পালা করে
সমস্যাটা হত যখন তাদের স্বামীর ঘরে l
প্রতিবারেই বেড়ে যেত নাতি নাতনির দল
দিদিমাকে টানতে হত সেই যাঁতার কল l
আয় বলতে ফসলটুকু অল্প জমিজমা
তিন ভাগে বাঁটত সেটা দুই পুত্র ও মা l
মেয়েদের কোনো ভাগ ছিল না বিবাহিত তাই
ছোট পুত্র দিদিমার সাথে, দুই ভাগ আয় l
বড় পুত্রের বড়ো সংসার ছেলে পুলে নিয়ে
লেখাপড়া জীবনযুদ্ধ প্রাণপণ দিয়ে l
বিপরীত চিত্র দিদিমার ঘরে সদা কোলাহল
নাই নাই আর খাই খাই ওঠে শোরগোল l
ছোট মামা নিয়ম করে ফেল বছর বছর
নাতি-নাতনির পড়ল না পা বিদ্যালয়ের ভিতর l
বনে বাদারে ঘুরে ঘুরে দিদিমা রসদ কুড়ায়
ফল-ফলাদি শাক-সবজি নানাবিধ জোটায় l
এদিকে ঘরে ঝগড়াঝাঁটি মারদাঙ্গা চলে
বিরতি একটু মেলে শুধু খাবার সময় হলে l
কোনদিন তাও মেলে না খাবারে পড়লে টান
অনাহারে গৃহযুদ্ধ, শান্তি ভেঙ্গে খান l
দুই সংসারে দুই চিত্র এক উঠানের মাঝে
একদিকে বিদ্যাচর্চা অন্যত্র বাসন বাজে l
বড়োমামা গুরু গম্ভীর ধ্যৈর্যর বাঁধ টুটে
রাগান্বিত রক্তচক্ষু এলেন সেদিন ছুটে l
ধপাস ধপ ছুড়লেন সবে ভাগ্নে ভাগ্নি যত
ঘর হতে দূরে মাঝ রাস্তায়, বকলেন অবিরত,
"তাঁতির বাড়ি ব্যাঙের বাসা, কোলা ব্যাঙের ছা
খায় দায় গান গায় তাই রে নাই রে না !"
এত সব মাঝে দিনশেষে সাঁঝে দিদিমার ভালবাসা
কমেনিকো কভু একরতি টুকু সকলেরে দেন আশা l
ভগ্ন শরীর জীর্ণ বসন খাটুনিটা হাড়-ভাঙ্গা
ঘানি টেনে যান স্নেহ অন্ত প্রাণ মুখ তবু হাসি-রাঙ্গা l
দিন চলে যায় বছর মিলায় দিদিমাকে নিল কালে
পৃথিবীতে কোথা থামেনিকো কভূ সংসার-চাকা জালে l
নিজ নিজ দায় বহিছে সবাই কেও আগে কেও পিছে
একজনে ছাড়া জগৎ চলে না এ ধারণা বড়ো মিছে l