সাদাকাফনে জড়ানো একটা নিথর দেহ বাইরের বারান্দায় গোসল দেওয়ার পর
লোকের ঢল নেমেছে , কেউ বেশিক্ষণ দাঁড়ায় না
কত লোক যে অপেক্ষমান দেখার জন্য
আত্মীয় স্বজন , পরিচিত , বয়স্ক প্রাক্তন ছাত্র ,
বেশ কিছু অমুসলিম বন্ধুবান্ধব সবাই ;
ঘরের ভিতর থেকে বোন , ভাগ্নী , ভাইঝি
নাতী নাতনীর কান্নার মৃদু গুঞ্জন
ছেলে জামাই ভাইপোদের কাঁধে খাটিয়ায়
এলো কবরস্থানের পাশের মাঠে
মাঠ ছাড়িয়ে রাস্তা পর্যন্ত গেল জানাজার মুসল্লি
এত ভিড় ইদানীং এই গ্রামে দেখেনি কেউ
স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক হওয়ায় আশেপাশের
গ্রাম থেকেও অনেকে এসেছে
যে শহরে শেষ কয়েক বছর থেকেছেন
সেখান থেকেও প্রচুর লোক এসেছেন
মৃদুস্বরে কেউ কেউ বলছে
মাষ্টারমশাই বিশেষ সম্পত্তি রেখে যেতে পারেননি ঠিকই তবে বেড়িয়ে মনের আশ পূর্ণ করেছেন
স্বদেশ ছাড়াও বিদেশের কত দেশে গেছেন
তার ইয়ত্তা নেই , দেশ বিদেশে কত পরিচিতি !
ভ্রমণের সৌজন্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে
সম্মাননা পেয়েছেন ; কজনের জোটে এমন  !
ওঁর তো একটাই স্বপ্ন ছিল বিশ্বকে দেখার
বিত্তবান হতে পারে অনেকে
কিন্তু কেউ কি স্বপ্ন দেখে দুনিয়া দেখার
তাছাড়া সন্তান দুটিকে তো মানুষের মতো মানুষ করেছেন  ; এ গ্রামে আর কে পেরেছে এমন
দুতিনজন প্রাক্তন শিক্ষিকাসহকর্মী ওঁর ভেঙেপড়া স্ত্রীর পাশে বসে সান্ত্বনা দিচ্ছেন
স্কুলের বর্তমান প্রধানশিক্ষক ছেলেকে শক্ত হতে বলছেন , প্রাক্তন হওয়া সত্বেও স্কুলে
একদিন ছুটি ঘোষণা করেছেন ।
কবরে শেষব্যক্তির মাটি দিতে অনেক অপেক্ষা
করতে হয়েছে ; শেষে আরেকবার দোয়া
তারপর যে যার বাড়ির পথে
নিঃসঙ্গ হয়ে কবরের মধ্যে শুয়ে থাকবে
কিছুদিন আলাপ আলোচনা
অতঃপর এই কর্মব্যস্ত পৃথিবীতে
যে যার কাজে ডুবে থাকবে  ।