( শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মহেশ গল্প অবলম্বনে )
মোমেনা মারা যাওয়ার পর গফুর বিয়ে করেনি আর মা-মরা ছোট্ট মেয়ে আমিনাকে বুকে আগলে
রেখেছে মা বাবার দুজনের ভালোবাসায়
তাকে বুঝতেও দেয়নি মায়ের অভাব ;
মোমেনার সেই হাড়ভাঙা খাটুনি, ঘর সামলানো
আঙ্গিনা নিকানো , মহেশের জন্য ঘাস খড় কাটা
সব একা সামলেছে  । গফুর তো সারাদিন মেহনত
করে পরের কাছে ভাগ চাষের চার বিঘা জমিতে;
যেটুকু পায় ভাগে তাতে তিনজনের কোনমতে
যায় চলে । কিন্তু সেই যে মোমেনা গেল মারা
তারপর থেকে সংসারে যেন দুর্যোগ লেগেই আছে
অতি বর্ষণ বা খরায় সিকিভাগও জোটেনি ।
সে জানে হিন্দু জমিদার , নায়েব , গোমস্তা
তার উপর কতটা ক্ষ্যাপা ; যখনতখন ডাক
খাজনার উনিশ বিশ হলেই কত না লাঞ্ছনা
কত না শাসানি; মুখ বুজে সব সহ্য করে
গফুর বাপদাদার চৌদ্দ পুরুষের ভিটে ছাড়েনি ।
দেখতে দেখতে আমিনার দশ বছর হয়ে গেল
মোমেনা তাহলে পাঁচ বছর গত হয়েছে ।
বাপ-মেয়ের সংসারে দুর্ভোগের শেষ নেই
নিজে জ্বরের অজুহাতে ভাত না খেয়ে
মহেশকে খাইয়েছে ; আমিনার চোখের আড়ালে
ঘরের চালের খড় খসিয়ে মহেশকে খেতে দিয়েছে ।
দায়ে পড়ে জমিদারের খাজনা মেটানোর জন্য মহেশকে কসাইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার
সিদ্ধান্ত নিয়েও হাতে তুলে দেওয়া দশটাকা
ছুড়ে ফেলে দেয় ধুলোয় ; জীবন থাকতে
মহেশকে কাছ ছাড়া করবে না । নিপীড়ন থেকে
পরিত্রাণের শেষ উপায় হিসেবে গাঁ ছাড়ার
কঠিন সিদ্ধান্ত নেয় গফুর । আর দু তিনটে বছর
পরে আমিনার বিয়ে দিতে পারলে সে নিশ্চিত হয় ।