শিয়ালদহ থেকে শেষ ট্রেনে বেলিয়াঘাটা ব্রিজ স্টেশনে নামলাম
তখন রাত প্রায় বারোটা ,
দুয়েকজন নেমে যে যার বাড়ির দিকে চলে গেল
আমাকে যেতে হবে বেশ একটু দূরের গ্রামে
দুটি গ্রাম ভেঙে ভেড়ির বাঁধ ধরে
শ্মশানঘাট ডিঙিয়ে আমার ছোট্ট গ্রামে পৌঁছাতে হবে ;
বেশ একটু ভয় ভয় করছিল
গ্রামে গ্রামে তখন চোর ডাকাতের উপদ্রব
একটা গ্রাম তো একটু বর্ধিষ্ণু
সেখানেই রাতবিরেতে ডাকাত পড়ে
গ্রামবাসীরা মিলে পাহারাদারের ব্যবস্থা রেখেছিল
সেখানে আসতেই মুখে টর্চের আলো
ভালো করে নিরিখ করে ছেড়ে দিল ।
দুচারটে কুকুর আমাকে দেখে ঘেউ ঘেউ করে
যা হোক শেষ পর্যন্ত কিছু করেনি
গ্রামের শেষে আসতেই শিয়ালের ডাক
আমার গা বেশ ছমছম করছিল
শকুনের কান্না উপেক্ষা করে দেখি
জনা দশেক লোক জটলা করে বসে আছে
আমাকে দেখেই দুজন উঠে এলো
একজন বললে , মনোয়ার মাস্টারের বাড়িটা চিনিস ?
এ তল্লাটের নামকরা লোক ওই মাস্টারকে
কে না চেনে ! মাস্টারি সাথে ভেড়িটেড়ি করে
বেশ টাকা কামিয়েছে ; আশেপাশের মধ্যে
গাংনিয়া গ্রামের কুখ্যাতি ছিল
আমতা আমতা করে বললাম চিনি
শালা বাঁচতে চাইলে আমাদের সাথে গিয়ে
বাড়িটা চিনিয়ে দিবি ; রাজি না হয়ে উপায় ছিল না
একজায়গায় ওকড়া গাছের বিরাট ঝোপ
সুযোগ বুঝে সেখানে গা ঢাকা দিলাম
ওরা এগিয়ে গেল ; কিছুক্ষণ পরে
বোমাবাজি আর গুলিগোলার শব্দ
যেখানে লুকিয়ে ছিলাম সেখানে নড়াচড়া পর্যন্ত করিনি ,
বিড়ি ধরাতেও সাহস করিনি
কতক্ষণ এভাবে ছিলাম জানি না
ঘন্টা খানেক পর ডাকাতরা সেখান থেকেই
ফিরে গেল , তারও অনেক পরে যখন বাড়ি ফিরলাম মোরগ বাং দিচ্ছে
পরদিন শুনলাম মনোয়ার মাস্টারের বাড়িতে
দুজন হাসপাতালে , একজনের মারাত্মক অবস্থা ।