কলঙ্ক
যতীন্দ্রমোহন বাগচী


বাতাবিকুঞ্জে সন্ধ্যার বায় পুষ্পপরাগচোর------  
কলঙ্কী মন, চেয়ে দেখ্ আজি সঙ্গী মিলেছে তোর।  
দিবা অবসান, রবি হ’ল রাঙা,  
পশ্চিমাকাশে নট্ কনা -ভাঙা;  
সঙ্গহীনের যাহা কিছু কাজ সাঙ্গ করেছি মোর,  
কুঞ্জদুয়ারে ব’সে আছি একা কুসুমগন্ধে ভোর!  
  
আধফুটন্ত বাতাবিকুসুমে কানন ভরিয়া আছে,----  
কি গোপন কথা গুঞ্জরি’ অলি ফিরিছে ফুলের কাছে!  
ফুটনোন্মুখ ফুলদলগুলি  
পুলক-পরশে উঠে দুলিদুলি  
গন্ধভিখারী সন্ধ্যার বায় ফুলপরিমল যাচে-----  
সঙ্কোচে নত পুষ্পবালিকা---অতিথি ফিরে বা পাছে!  
  
বেলা বয়ে যায়, সন্ধ্যার বায় আসি’ কহে বার বার,  
সন্ধ্যা হয় যে অন্ধ কুসুম-----খোলো অন্তর-দ্বার!  
মুকুলগন্ধ অন্ধ ব্যথায়  
কুঁড়ির বন্ধ টুটিবারে চায়,  
লুটাইতে চায় সন্ধ্যার পায় রুদ্ধ আবেগভার,  
বিকাইতে চায় চরণের পরে কৌমার সুকুমার।  
  
মন্থরপদে সন্ধ্যা নামিছে কাজলতিমিরে আঁকা,  
দুয়ারে অতিথি, অন্তরে ব্যথা--- সম্ভব সে কি থাকা?  
গন্ধে পাগল অন্তর যার,  
আবরণ মাঝে থাকে সে কি আর,  
খুলি’ দিল দ্বার, পরান তাহার পরাগে-শিশিরে মাখা;  
কুঞ্জ ঘিরিয়া আঁধারে ছাইল স্বপ্নপাখীর পাখা।  
  
বাতাবিকুঞ্জে সন্ধ্যার বায় পুষ্পপরাগচোর----  
হা রে কলঙ্কী হৃদয় আমার, সঙ্গী মিলেছে তোর।  
দূরদিগন্তে দিবা হল সারা;  
অন্তর ভরি ফুটে’ উঠে তারা,  
নব-ফুটন্ত নেবুর গন্ধে আসিল তন্দ্রাঘোর-----  
কলঙ্কী প্রেম, মুগ্ধ হৃদয়-----একই "পরিণাম তোর।