প্রথমত আমি বই পর্যালোচনায় সিদ্ধহস্ত নই। আমি শুধু বই পড়ে বইটি আমার কেমন লাগল তা বর্ণনা করতে পারি। কাজেই ভুল ত্ৰুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করছি ।

কয়েকদিন আগে আমি অত্যন্ত আগ্রহ করে একটি বই কিনেছি। বইটির নাম তালকানা। বই লিখেছেন আমাদের প্রবুদ্ধ কবি ফারহাত আহমেদ। আমি যতটুকু বুঝি তালকানা শব্দের অর্থ তাল হীন। আমি ধরেই নিলাম আমি যা পড়বো তাতে হয়তোবা তাল তেমন একটা থাকবে না। তাতে কি সবকিছুতে তাল থাকতে হবে এমন তো কথা নেই। তবে একজন কবি যখন সচেতন ভাবে তালকানা বলেন তখন ধরেই নিতে হয় তিনি আসলে একটা মেসেজ দিতে চেয়েছেন যে উনার কবিতাগুলি হয়তো বা তালের যে প্রথাসিদ্ধ নিয়ম তা মেনে চলবে না।

কাজেই অত্যন্ত আগ্রহভরে কবিতা গুলি পড়লাম এবং বলতেই হয় এক অন্য ধরনের তালের মধ্যে সময়টা কেটে গেল দারুন।
তালকানা ১ থেকে তালকানা ৪০ সর্বমোট ৪০ টি কবিতা। এক একটি এক এক স্বাদের, একেক ধরনের এবং সিগনেচার্ড ফারহাত আহমেদের কবিতা।

যেমন প্রথম কবিতায় তিনি বললেন

আন্ধার দিনে বান্দার কাছে/ ধান্দার কথা পারব
সন্ধ্যার পরে ছন্দার ঘরে/ মন্দার কড়া নাড়বো

চারিদিক যখন অন্ধকার হয়ে আসে তখন মানুষ বাঁচার তাগিদেই বাঁচতে শেখে তা সে যে কোনো উপায়েই হোক না কেন। পেটে যখন খাবার থাকে না তখন সব কিছুই শুদ্ধ ।

কিংবা তালকানা ১৪ তে

বলতে চাইনি /লিখতে চাইনি/ চাইনি এমন ছবি /ঘরে ঘরে আজ /উপচে পড়েছে/ সস্তা কথার কবি.

আহা কি সুন্দর কথা বর্তমান সময়ে কবিতার চালচিত্র আর কে ফুঁটিয়ে তুলবে এভাবে?
এমনি অনেক ভাবনা জাগানো কবিতায় ভরা বইটি।

কোনটা মালার বর্ণ জানি না/বর্ণমালা শিখছে
জমিরের ছেলে দলিল এখন /জমির দলিল লিখছে।

কিংবা

মানবে না কেউ বোঝার আগে / মানবার পথ ঘেঁটেছি
প্রেম করেছি করার দায়ে /একঘরে জেল খেটেছি ।

ঠিক এরকম ৪০ টি কবিতা স্থান পেয়েছে বইটিতে।

বইটিকে তালকানা বললেও আসলে বইটি নিজস্ব ঢঙ্গে নিজস্ব তালে লেখা। বইটি পড়ে আমার মনে হয়েছে, কবি প্রথাসিদ্ধ তালকে পাশ কাটিয়ে সম্পূন নতুন একটি তাল সৃষ্টির প্রচেষ্টা করে গেছেন সচেতনভাবে এবং কবি সেই ক্ষেত্রে সফলও হয়েছেন।

পরিশেষে, কবিকে সুন্দর একটা বই উপহার দেয়ার জন্য থাকল অনেক শ্রদ্ধা।
প্রিয় কবির জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।