============================

ছেলেটা মায়ের মাথার দিব্বি মানেনি।
বোনের মায়া, ভাইয়ের শাসন, বাবার রক্তচক্ষু
কিছুই তাকে টলাতে পারেনি।  
ছেলেটা একছুটে রাস্তায় জনতার মধ্যমনি।
চারিদিকে চিৎকার, চেঁচামেচি
টিয়ার গ্যাস, মুহুমুহু গুলি, স্লোগান
এপিসি, সাঁজোয়া যান, জল কামান
আগুনে হেলিকাপ্টার।

ছেলেটা দু'হাত দু' দিকে প্রসারিত করে হিমালয়ের মতো দাঁড়ালো।
একদিকে হিংস্র হায়েনার মতো নীল সমুদ্র
আরেক দিকে অদম্য তারুণ্য।
একদিকে সতত শুভ্র, সত্য
আরেক দিকে মিথ্যের বেসাতি নির্লজ্জ।

ছেলেটা প্রসারিত বুকে নীল সমুদ্রের হিংস্রতা শুষে নিতে চাইলো।
শুভ্রতার জয়গান গাইতে চাইলো।
কিন্তু শতসহস্র হিংস্র চোখ, রক্তলোলুপ রাইফেলের নল
বীভৎস  উল্লাসে নির্মম হোলিখেলায় মেতে উঠলো।
ছেলেটা ভয় পেলো না
দুহাত আরও প্রসারিত করে হিমালয়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকলো।  
যেন হৃদয়ের বিশালতা দিয়ে বলতে চাইলো
আমি তোমাদের ভাই, তোমাদেরই পুত্র
আমি তো তোমাদের ই।

প্রথম গুলিটা ছেলেটার বাম দিকের তলপেটে আঘাত করলো।
ভীষণ কেঁপে উঠলো ছেলেটা।
ছুঁয়ে দেখলো কোনো রক্ত নেই
ছেলেটার চোখ যেন বললো
আমি ঠিক জানতাম, আমাকে গুলি করতে পারে না
ছেলেটার অটল বিশ্বাস অটুট থাকলো।
সে আবার দুহাত দু দিকে বাড়িয়ে, যেন বুকে নিতে চাইলো
সকল দুঃখ, কষ্ট, বেদনা আর বৈষম্যকে।

তারপর একে একে অনেকগুলো গুলি ছেলেটাকে কাঁপিয়ে দিলো
ছেলেটা তবু বিশ্বাস করলো না।  
রাজদণ্ডের হিংস্র ছোবল তার ভিতরটা ছিঁড়ে-কুঁড়ে রক্তাক্ত করে দিলো
ভালোবাসার পাহাড় রক্তস্রোতে ভেসে গেলো
সে তবুও বিশ্বাস করলো না।
  
ছেলেটার চোখ প্রশান্ত মহাসাগরের বিশালতায় সিক্ত
ছেলেটার বুক হিংস্র নখের আঘাতে রক্তাক্ত
ছেলেটা
হাটু গেড়ে পরে যাওয়ার ঠিক আগে বির বির করে বললো
তবু দূর হোক সব বৈষম্য।
==========================

(বাংলাদেশে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় ২৮ জুলাই ২০২৪ তারিখে রচিত