================

আমি আরেকজন আনাসের জন্ম দিবো না।
আমি আরেকজন আনাস কে  দেশ কে ভালোবাসতে শেখাবো না।
আমি আরেকজন আনাসকে
বুকের রক্ত অনায়েসে ঢেলে দেয়ার জন্য প্রস্তুত করবো না।
যে দেশ আনাসের রক্ত স্রোতে দাঁড়িয়ে আনাসকেই ভুলে যায়
যে স্বাধীনতা আনাসের আত্মত্যাগের উপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতার প্রাসাদ সাজায়

সে দেশ আমার না।
সে স্বাধীনতা আমার না।

আমি একজন আনাসের মা।
গড়ে তুলেছি তিলে তিলে
অগ্নিগর্ভ জঠরে প্রতিবাদী ফুটন্ত লাভা।
উগরে দিয়েছি মাতৃ মূলে, জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার এ বিশ্ব সভা।
ছিনিয়ে এনেছি পরম আরাধ্য এ দ্বিতীয় স্বাধীনতা।
অনাসদের স্বাধীনতা।
আমি এখন রিক্ত নিঃস্ব, আমার কাছে আর কিছু নেই
আছে শুধু চিঠি একখানা
আর আনাসের কিছু শেষ কথা
চোখ ছলছলো
' মা, আমি যদি ফিরে না আসি তবে
কষ্ট না পেয়ে গর্বিত হয়ো'।

আনাস ফিরে আসেনি।
আনাসের নিথর দেহ ছিল আমার কোলে
রিকশায়
টপটপ রক্ত আল্পনা আঁকছিল কালো রাজপথে
বীরের বন্দনায়।
না, কেউ তাকে চিকিৎসা দেয়নি
মানবতা ছিল  তখন স্বৈরাচারের কব্জায়
কেউ তাকে শেষ মুহূর্তে পরম আদরে হাত বুলায়নি
তার নিথর দেহ পড়েছিল নোংরা লাশ ঘরের মেঝেতে নিষ্ঠুর অবহেলায়

আমার বুকের ধন
ছিনিয়ে নিলো তারা ভীষণ হিংস্রতায়
তারপর,
ভুলে গেলো সবাই

স্বাধীনতা এলো
ক্ষমতা পেলো
কিন্তু আমার আনাস ফিরে এলো না।

না, আমি আনাসের মা
আমি আনাসের জন্য ভিক্ষের ঝুলি হাতে দাঁড়াবো না।
আমি বীরের জন্মদাত্রী, ভিখেরি নই
আমি অধিকার ছিনিয়ে নেই, হাত পাতি না।

আমার মতো আরো অজস্র সহস্র মা
আমরা আর কখনোই অনাসদের জন্ম দেব না।

=============================

(বাংলাদেশের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আনাস ০৫ অগাস্ট ২৪  তারিখে স্বৈরাচারের গুলিতে মৃত্যবরণ করে। সে ছিল দশম শ্রেণীর ছাত্র।
সে মিছিলে যাওয়ার আগে একটি চিঠি লিখে তার মা কে উদ্দেশ্য
করে ।
সেই আত্মদানকে অনুসরণ করে অনলাইন এক্টিভিস্ট জনাব পিনাকী একটি সাক্ষাৎকার নেয়।

সেই সাক্ষাৎকারে আনাস এর মায়ের আকুতিই এই কবিতার ইনস্পিরেশন।  

আনাসের বিশালতার কাছে আমি ক্ষুদ্র। সেই বিশাল সত্তার চিঠিটাই এখন আমার প্রোফাইল ছবি।

Interview link is here

https://youtu.be/RAMyk67GWeA?feature=shared)