যে কথাটি বলে রাখা দরকার : জ্ঞানগর্ভ আলোচনা এবং বিশদভাবে জানার জন্য বাংলা বানানের নিয়ম এবং অভিধানই যথেষ্ট। এখানে এমনকিছু ক্রিয়াপদ তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলো জেনে না-জেনে প্রায়ই আমরা ভুল করে বসি। যারা না-জেনে ব্যবহার করেন- তাদের জানার আগ্রহটা কম, কারণ এতেই চলে যাচ্ছে। আবার, যারা জেনে ব্যবহার করেন- মাঝেমধ্যে তাদেরও গুলিয়ে যায়। একটু সচেতন হলেই কিন্তু ক্রিয়াপদের টুকিটাকি ভুলগুলো আমরা শুধরে নিতে পারি। বাক্যে প্রয়োগ করে ক্রিয়াপদগুলোর ব্যবহার নিচে দেখানো হলো। প্রথম বন্ধনীতে ভুল বানানগুলো আবদ্ধ করা হয়েছে।
১. আমাদের শরীর হলো (হল/ হোলো) পচনশীল। তার উপর মিথ্যে অপবাদ চাপিয়ে দেয়া হলো। ঘটনাটি ঘটানো (ঘটান) হলো অতি সাবধানে। সে হলো অমাবস্যার চাঁদ, কী করে দেখা পাবে।
২. প্রতিদিন আমাদের ভোরে উঠতে হতো (হোতো/হত)। আমার জায়গায় তুমি থাকলে ভালো হতো।
৩. আমি হবো (হব) সকালবেলার পাখি। বড় হয়ে মানুষের মতো (মত/ মোতো) মানুষ হবো।
৪. আমরা পরিবারের সবাই একত্রে রাতের খাবার খাই (খায়)। আমটিকে দু-ভাগ করে, এক ভাগ আমি খাই (খায়), অপরটি আমার ছোট ভাই খায় (খাই)। গত সপ্তাহে আমি বনভোজনে যাই (যায়)। সেও যায় (যাই)। আমরা বনভোজনে অনেক মজা পাই (পায়)। তারা/ সে পায় (পাই)। আমি/আমরা নিই (নেয়)। তারা/ সে নেয় (নেই)। আমি লাফাই। সে লাফায়। আমি হাঁপাই। সে হাঁপায়। আমি/আমরা পালাই। সে/তারা পালায়। গতকাল এই জায়গাতেই আমি নোটটি হারাই। সে হারায়। মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র উত্তম পুরুষের (যেমনÑ আমি, আমরা, আমাদের) ক্ষেত্রে ই বসবে।
৫. আনোযুক্ত শব্দে নো হয়। যেমন- জানানো, শোনানো, আনানো, মানানো, বানানো, টাঙানো, রাঙানো, ভাঙানো, শানানো, রাগানো, জাগানো, কাঁদানো, হাসানো, পোড়ানো, ভরানো, মোড়ানো, জড়ানো, খোঁড়ানো, দাঁড়ানো, ভাগানো ইত্যাদি।
৬. একখাটে কি তিনজন শোয়। শোয়া নিয়েতো ভালো ঝামেলা হলো। শোন, আমার চার বন্ধু একখাটে শুত (শুতো)। ডালিম আর আমি আজ খাটে শোব (শোবো)। রাজা, আজ তুমি মেঝেতে শোও (শও), কাল খাটে শুয়ো।
৭. সে প্রতিদিন আইসক্রিম খেত (খেতো)। সে প্রত্যেক বিকেলে ব্যালকনিতে বই পড়ত (পড়তো)। জাবির কোথাও বেড়াতে গেলে সাথে নিত (নিতো) তার শখের ক্যামেরা। জন্মদিনে তুলি আমাকে বই উপহার দিত (দিতো)। আঁখির জন্মদিনে আমিও বই উপহার দেবো (দেব)। মা আমকে যেতে দিল (দিলো) না। আজ রাতের খাবার খাব (খাবো) না। বইটি না হয় ধার হিসেবে নিও, পরে সময়মতো ফেরত দিয়ে দিও।
৮. আমি কাজটি করব (করবো)। আমি আরও শিখব (শিখবো)। এত উঁচু গাছে আমি উঠব (উঠবো) না। অনুরূপভাবে- জানব, মারব, পারব, লিখব, শিখব, রুখব, ছুটব, কাটব ইত্যাদি।
৯. কাজটি দ্রত শেষ করো (কর)। তাকে অবহেলা কোরো (করো) না। আদেশ বোঝোতেÑ করো, উপদেশ বোঝাতে কোরো ব্যবহৃত হয়।
১০. তার সাথে সময়টা ভালো কাটল (কাটলো) না। এবারও সে অঙ্কে পাস করল (করলো) না। অনুরূপভাবে- মানল, জানল, পারল, শিখল, লিখল, উঠল, ছুটল, ফুটল ইত্যাদি।
১১. ‘সংকল্প’ কবিতাটি লেখো (লেখ)। অনুরূপভাবে- শেখো, রেখো, ওঠো, ছোটো (ছুটে যাওয়া), কাটো, হাঁটো, চাটো, খাটো (খাটা), ছাঁটো (ছাঁটা) ইত্যাদি।
১২. শীতের বিকেলগুলো ভালোই কাটত (কাটতো)। হাসান হলে এই কাজটি করতে পারত (পারতো)। সে মাঠের বড় জাম গাছটায় প্রায়ই উঠত (উঠতো)। রানি নিয়মিত চর্চা করত (করতো) না। অনুরূপভাবে- মানত, জানত, করত, মারত, লিখত, ছুটত, ফুটত ইত্যাদি।
কিছু সর্বনাম, বিশেষণ, অব্যয় ও অনুসর্গের ব্যবহার :
১. এ প্রশ্নের কোনো (কোন) জবাব হয় না। কোনো/কোনও (কোন) একদিন আমি সফল হবো। তার বাঁচার কোনো/কোনও (কোন) আশায় ছিল না। কোনো/কোনও (কোন) চিন্তা করিস না, আমি দেখি কী করা যায়।
২. তুমি কোন (কোনো/কোণ) ধরনের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে চাও? তোমার পছন্দের বিষয় কোনটি? চোখের কোণে (কোনে) দুখের জল।
৩. ট্রেন দুর্ঘটনায় হতাহতের (হতো) সঠিক সংখ্যা এখনও (এখনো) জানা যায়নি। হতদরিদ্রদের মাঝে শীতের পোশাক বিতরণ করা হয়েছে।
৪. চলাচলে কখনও (কখনো) ট্রাফিক রুল অমান্য করবে না। আরও (আরো) একবার চেষ্টা করে দেখ কী হয়। আবারও (আবারো) তুম একই ভুল করলে। তখনও (তখনো) সে নিশ্চুপ ছিল। আজও (আজো) কী আমরা স্বাধীন হতে পেরেছি! এবারও (এবারো) তুমি একই পথে হাঁটছ।
৫. তার মতটা জানা খুব জরুরি। এ বিষয়ে আমি একমত হতে পারলাম না। এই বাক্য দুটিতে সম্মতি প্রকাশে মত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
৬. তুমি কি (কী) যাবে, না যাবে না? তোমার উন্নতির পেছনে আসল কারণটা কী (কি) বলবে? শুধুমাত্র এক কথায় বা হ্যাঁ-না বোঝালে কি ব্যবহার করতে হবে। নয়তো কী বসবে। এত (এতো) টাকা দিয়ে তুমি কি করবে? এটার কতই (কতো) বা আর দাম হবে। যত (যতো) পড়বে, তত (ততো) শিখবে। এতো, কত, যত, তত শব্দগুলোতে ও-কার ব্যবহার নিষ্প্রয়োজন।
৭. বিষয়টা কেনো (কেন) তাকে জানানো হয়নি? সে যেনো (যেন) একবার আমার সাথে দেখা করে।
বন্ধনীতে আবদ্ধ সব বানানই যে ভুল এমন ভাবাটা ঠিক হবে না। কিছু প্রকাশন এবং পত্রিকা বিশেষ কিছু বানান ব্যবহার করে থাকে। যেমন- কোনো, কখনো, এবারো, আবারো, এখনো, আরো ইত্যাদি শব্দগুলোর বানান কোনও, কখনও, এবারও, আবারও, আরও, এখনও এভাবে লেখা হচ্ছে। আবার, কেনো-কেন, যেনো-যেন উভয় বানানই সঠিক। দেব শব্দটি দেবতাবিষয়ক; হল বলতে সিনেমা হল, হলরুম বোঝায়; কর বলতে রাজস্ব কর, মূল্য সংযোজন কর বোঝায়; আবার সম্মতি বোঝাতে মত ব্যবহৃত হয়; তাই ক্রিয়াপদ হিসেবে যথাক্রমে দেবো, হলো, করো এবং অনুসর্গ হিসেবে মতো ব্যবহার করাই ভালো। তবে যেকোনো লেখায় একইরকম বানানরীতি অনুসরণ করা বাঞ্চনীয়। বর্তমানে প্রকাশন এবং মিডিয়াগুলোতে উল্লেখিত আধুনিক বানানই ব্যবহৃত হচ্ছে।