গলা পানিতে থেকেও একাব্বরের বুকটা দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে
এই কাল চোখে নদী ভাঙন দেখতে দেখতে আজ সে বড় ক্লান্ত
এক এক করে তের বার ঘর-বাড়ি ভাঙা আর গড়ায় হাফিয়ে
আজ পথে বসেছে সে জীবনের দূর্বিপাকে ঘোলা ঢেউর চক্করে।
তাঁর চোখের সামনে এখনো খেলা করে
একটা সুন্দর গোধূলি বেলা, বাড়ি ভর্তি মানুষ আটখানা আনন্দ আহ্লাদে
বড় ছেলে মাঠ থেকে হৈহৈ করে বাড়িতে ফিরছে জোয়ান বলদ-ষাঁড় নিয়ে
আঙিনায় হাঁস মুরগির দাপাদাপি! উঠানে ধান নিয়ে ব্যস্ত বউ ঝিঁয়েরা।
হঠাৎ পশ্চিমাকাশে কালো মেঘের ডাকাডাকি, সর্বনাশা ব্রহ্মপুত্রের এগিয়ে চলা
ধান ভেসে গেল বানের পানিতে, হাঁস-মুরগির নেয়া হয়নি খোঁজ
জোয়ান বলদ আর ষাঁড় গুলোকে ছেড়ে দিয়ে বলেছিল একাব্বর
"যা বাবা যেথা খুশি, থাকিস বেঁচে, তোর কষ্ট যে সইতে পারি না!"
সেইবার সব কিছু গ্রাস করল ব্রহ্মপুত্র লুটেপুটে নিল সুখের সংসার
আহ! বউটাও অভাগা একাব্বরকে রেখে কলা গাছের ভেলায় ভেসে গেল
কোন দূর অজানায়! একাকী এক আত্মাভিমানে সাদা সাড়ি জড়িয়ে
যার জমির অন্ত ছিল না; সে পারেনি বউকে সাড়ে তিন হাত মাটি দিতে....
একাব্বর এসব মনে করতে চান না আর! কি লাভ অতীত হাতরিয়ে?
যে নদীকে আশির্বাদ রুপে পাওয়ার কথা ছিল একাব্বরদের
সে প্রতি বছর অভিশপ্ত রুপে দেখা দেয় কোন অসুরের তাণ্ডবে?
তাদের যে সুখের সংসার ভেঙে যায় তা কি কোনো দিনও ফিরে পাবে না?
প্রত্যেক বছরের সৃষ্ট বন্যা থেকে মুক্তি কি পাবে না একাব্বরেরা? হে নদীজন!
(একাব্বরের কথা_জরীফ উদ্দীন)