অনিশ্চয় (তৃতীয় পর্ব)
==================
অনিমেষ আজ ব্যস্ত ভীষণ
সকালের সোমবার
অবসর- তবু অবসর হীন
দৌড়ানো দরকার।
কর্ম জীবন গিয়েছে ফুরিয়ে
যাতায়াত ডেলি (ডেইলি) আছে
উমেদারি চলে মান খুইয়ে
ওপরওয়ালার কাছে।
ছ’বছর হল শয্যাশায়ী
তিরিশের সঙ্গী
ট্রাপিজের খেলা খেলছে জীবন
অসহায় ভঙ্গি।
পেনশন চালু খুব দরকার
আমদানি শূন্য
ঠোক্কর খেয়ে রোজ ফিরে তার
মেজাজ টা ক্ষুণ্ণ!
শ্রীমতী সুধালো কাতর কণ্ঠে
কখন ফিরবে ওগো?
ছাতা টা নিও, নিজের প্রতি
নজরও একটু রেখো!
ক্ষুব্ধ হৃদয় নীরবে বলল
মুক্তি দেবে কি তুমি!
কতটা কষ্টে এলো সে কথা
জানেন অন্তর্যামী!
আজকেও কিছু হয়নি তো কাজ
আসছে সোমবার!
বড় সাহেব ব্যস্ত! বুঝে নিল মন
উপহার দরকার।
অফিসের থেকে বেরল যখন
দু’টো কি তিন টে বাজে
হাত ঘড়ি টা থেমেছে কখন
আসেনা তেমন কাজে।
আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল
মুখ টা হয়েছে ভার
টুপুরের সাথে কথা হয়েছিল
দেখা হবে সোমবার!
ব্যস্ততা পায়ে উজিয়ে এলো
সামনেই ময়দান
পশ্চিমা মেঘ তেজীয়ান্ হয়ে
সহসাই আগুয়ান!
ওই তো দূরে বটগাছ সেই—
ট্যাক্সি এসে থামল— !
দুর্যোগ দেখে টুপুর কি তবে
ফেরার পথ টা ধরল!
অবিশ্রান্ত বৃষ্টি ধারায়
মুখো মুখি বসে তিন
অনিমেষ – বট – শূন্য আসন
হেরে যাওয়া প্রতিদিন!!
===================
অনিশ্চয়! (প্রথম পর্ব)
===================
দ্বি প্রহরের গ্রীষ্ম দুপুর—
ভুবন জুড়ে বইছে যখন তপ্ত লহর
ঝিমিয়ে তখন আমার শহর
হঠাৎ আমার হারানো সে নাম টি শুনে—
জুড়িয়ে গেলো কর্ণ কুহর!
“টু-পু-র”—
তাকিয়ে পিছে দেখি তাঁকে
চশমা মোটা ফ্রেমে—
চিলতে হাসি আলতো লেগে
ঠোঁটের কোনে থেমে।
তুমিই তবে ডাকলে আমায়
হারানো নাম ধরে!
সত্যি বলি- ভীষণ অবাক
কেমন গহীন ঘোরে!
চেনা চেনা লাগছে তোমায়
পড়ছে না নাম মনে-
কেমন করে চিনলে আমায়
কোন সে রেখা গোনে!
আবার দেখো- হাসছো কেন!
ধাঁধাঁর জবাব দাও
এমন করে গুলিয়ে দিয়ে
কোন সে মজা পাও!
আচ্ছা ছাড়ো, না হয় নাই বা দিলে
তোমার পরিচয়-
মধ্য দুপুর ভীষণ রোদে
আলাপ অনিশ্চয়।
চলো- একটু বসি গাছের ছায়ায়
আসন পাতা যেথায়
স্মৃতির পরত খুলেই ফেলি
পুরনো সব কথায়।
ইনিয়ে বিনিয়ে কত্ত কথা
ঘণ্টা খানেক পার
তুমি বললে- এবার উঠি, আসব না হয়
আসছে সোমবার।
হলুদ ট্যাক্সি মিলিয়ে গেল
চোখের সামনে থেকে
তক্ষুণি ঠিক মনের ভেতর
পড়ল মনে তাঁকে—
উড়ো চিঠি আসত ডাকে
প্রতিটি সোম বারে
খামের ভেতর আতর ঢেলে
আদর অকাতরে!!
==================
অনিশ্চয়! দ্বিতীয় পর্ব)
===================
টুপুরের চোখে ঘুম নেই রাতে
নয়নে নীরব অশ্রু
ফিরে ফিরে আসে মোটা ফ্রেম চোখ
মুখে মার্জিত শ্মশ্রু!
তিন বার উঠে জল খেল রাতে
গলা যে শুকিয়ে কাঠ—
নয় নয় করে বয়েস হয়েছে
অলমোস্ট ঊনষাট।
পাশের ঘরেতে ঘুমিয়ে খোকা
নাতি বৌমার সাথে—
অনুঢ়ার লাজে মুখ ঢেকে ফেলে
হঠাতই শীর্ণ হাতে!
কতবার ভাবে ভাববে না আর
পুরনো দিনের কথা
স্মৃতি তবু হল বিট্রেয়ার
ফেরালো পুরনো ব্যথা!
সোমবার কবে আসবে আবার
আবার দুপুর হবে—
মধ্য গগনে সূর্য রাজিবে
চন্দ্রিমা বুকে রবে!
কি জানি কেমন নিদাঘ ঘোরে
কেটে যায় সারা বেলা
আবছায়া শত উদ্বেগ ভারে
ভরে থাকে কালবেলা!
অবশেষে এল সেই শুভক্ষণ
রাত হল অবসান—
দুরু দুরু বুকে স্নান সেরে এসে
মুক্তির আবাহন—!
চৌকাঠে এসে আটকে গেলো
হোলনা সাহস আর—
লোক ভয় তার রুখে দিল সাধ
গণ্ডি টা পেরোবার!
ঊর্ধ্ব গগনে সৌর বিরাজে
তখন মধ্য দুপুর—
পূজার আসনে কাতর মিনতি
ওকে ভাল রেখ তুমি ঠাকুর!!
===================