প্রিয় কবি শ্রীযুক্ত জগদীশ চন্দ্র মণ্ডল মহাশয় তার “নপুংসক” শিরোনামের ৫ পর্বের ধারাবাহিক কবিতায় কতিপয় মানুষ যারা হিন্দু ধর্মী হয়েও কথায় কথায় হিন্দু ধর্ম কে গালাগালি করে তাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা লিখেছেন … অনেকেই তার সঙ্গে একমত হবেন আবার কেউ ভিন্ন মত ও রাখতে পারেন।
যদিও আমার ব্যক্তিগত মতামত মিশ্র।
প্রথম প্রশ্ন স্রষ্টা কে গালাগালি করা যায় কি না?
যিনি স্রষ্টা তিনি তো সকল সৃষ্টির মালিক… তাহলে যারা স্রষ্টা কে গালাগালি করে তারাও তো তাঁরই সৃষ্টি।
শেষ বিচারের মালিক যিনি, তাঁর অপমানের বিচারের ভার তাঁর ওপরে ছেড়ে দিলেই ভাল হয় না কি?
তাঁর দায়িত্ব বা বিবেচনার ভার তাঁর থেকে কেড়ে নিয়ে মানুষই যদি বিচারকের আসনে বসে পড়ে তবে কি স্রষ্টার প্রতি সঠিক আনুগত্য দেখানো যায়?
দ্বিতীয় প্রশ্ন এই বিষয়ে একটি স্বাভাবিক যুক্তি দেখান হয় যে “যদি আপনার বাবা বা মা কে গালাগালি করা হয় তবে আপনি কি করবেন!”
বাবা মা কে কেউ গালাগালি করলে গায়ে তো লাগবেই, পারলে আপনি যুদ্ধ করতেও পারেন…
কোন একজনের বাবা মা তো সকলের বাবা মা নয়, বা অসীম (জগত) ক্ষমতার অধিকারি ও নন, তাই বাবা মা এর ওপরে কোন আঘাত এলে তাঁদের রক্ষার্থে তাঁর সন্তান রা এগিয়ে আসবে এটাই স্বাভাবিক…
কিন্তু একই যুক্তিতে স্রষ্টাকেই যদি বাবা মা ভেবে নেওয়া হয় তাহলে যে স্রষ্টার “অখণ্ড মণ্ডলাকারং” ব্যাপ্তি তা কিন্তু ব্যক্তিগত পরিসরে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং স্রষ্টা অসীম থেকে সসীমের গোলকধাঁধায় জড়িয়ে পড়ে; আর সেখান থেকেই যত অশান্তির শুরু।
সনাতন হিন্দু ধর্মে স্রষ্টার ধারণা কেমন একটু ভেবে দেখা যাক......
“অখণ্ড মণ্ডলাকারং ব্যাপ্তং য়েন চরাচরং”
উপরিউক্ত শ্লোকের অর্থ বোঝার চেষ্টা করি। অখণ্ড’ অর্থাৎ সেই পরমাত্মা যাকে খণ্ডিত বা টুকরো করা যায় না । ‘মণ্ডলাকারং’ অর্থাৎ গোলাকার সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ডে, ‘ব্যাপ্তং’ অর্থাৎ ব্যাপ্ত বা সমাহিত রয়েছেন । ‘য়েন’ অর্থাৎ এই ‘চর’ অর্থাৎ সমস্ত জীবের মধ্যে বা ‘অচর’ অর্থাৎ সমস্ত নির্জীব বস্তুর মধ্যে অর্থাৎ সব কিছুর মধ্যে যিনি মিলে মিশে রয়েছেন ।
অর্থাৎ “তিনিই পরমাত্মা যাকে খণ্ডিত করা যায় না । যিনি সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ডে ব্যাপ্ত রয়েছেন, সমস্ত জীবিত ও নির্জীব বস্তুর মধ্যে, সৃষ্টির প্রতিটি অণুতে পরমাণুতে বিদ্যমান ......”
আমি কোরান এবং বাইবেল পড়েছি (অবশ্যই বাংলা অনুবাদিত) যদিও এই সকল ধর্ম সম্পর্কে আমার জ্ঞান খুবই সীমিত, তথাপি আমার উপলব্ধি এই সকল ধর্মে ও স্রষ্টার ধারণা একই রকম।
তাই স্রষ্টা যখন নিজেই সকল ব্রহ্মাণ্ডের অধীশ্বর অথবা তিনিই যখন আসলে ব্রহ্মাণ্ড তখন তাঁকে বা তাঁর সম্মান রক্ষা করার দায়িত্ব কোন ভাবেই কি মানুষের ওপর বর্তায় না কি মানুষ তার যোগ্য হয়ে উঠতে পারে???
যিনি বিশ্বাসী তিনি বিশ্বাস রাখুন, যিনি অবিশ্বাসী (এটাই তার বিশ্বাস) তিনি না হয় গালাগালিই করুণ … আমি তো বিশ্বাস করি- স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টি কে এভাবেই সাজিয়েছেন… খোদার ওপরে খোদকারী না করে কি নিজের বিশ্বাসে অটল থাকা যায় না???