ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সব নবজাতক ই ভীষণ অসহায়।
তাকে নাওয়ানো খাওয়ানো ঘুমপাড়ানো
তার সকল প্রয়োজনে চাই মায়ের স্নেহের পরশ।
সে যেন এক ঘুড়ির মত
উতলা বাতাসে ওড়ার আশায় তার হৃদয় ব্যাকুল।
আর মা যেন তার লাটাই--
ঝড়ের বুকে ছোট্ট ঘুড়িকে জাগিয়ে রাখার, ভাসিয়ে রাখার অবিরত লড়াই।
ঘুড়ি যখন মলয় বাতাসে পতপত করে ওড়ে,তার ওই ওড়াতেই আনন্দ।
আরো উপরে, সবথেকে উপরে, সকল আকাশ ছাড়িয়ে
দূরের ঠিকানায় আকাশের কানায় কানায় ভেসে বেড়ানোর আনন্দ।
কোন ভয় নেই, ভাবনা নেই--
শুধু ভেসে বেড়ানোর,হেসে বেড়ানোর, খুশি বিলানোর আনন্দ।
আর লাটাই… তার কোথাও যাওয়ার নেই,
বিচলিত হওয়ার বিলাসিতা নেই, মনখারাপের রোমান্টিকতা নেই
ভেসে বেড়ানোর রোমাঞ্চ নেই,
আছে…. দেখে রাখার, সুতো ধরে রাখার
ঘুড়ি কে হাওয়ায় ভাসিয়ে রাখার দায়বদ্ধতা
তাকে উড়তে দেখার আহ্লাদ।
সময় বদলাতে থাকে,
ভূমিকাবদলে যায়….
লাটাই যে কখন ঘুড়ি হয়ে তাঁর ঘুড়ির আকাশে উন্মুখ চেয়ে থাকে….কে জানে!
হৃদয় নিংড়ে তুমি ভোর রাতে চাঁদ নিলে কোলে
কত রাত কাটিয়েছো নির্ঘুম শুধু ভালবাসো বলে।
যখন ঝড়ের রাতে অগণিত তারা ঝরে অতলে
বুকের পাঁজর দিয়ে নিধিরে তোমার রেখেছো আগলে।
বেলা পড়ে এলে ধুলো খেলে এলে জড়ায়েছ নরম আঁচলে
ক্লান্তিময় স্বেদবিন্দুটুকু হাসি মুখে নিয়েছো অধরে তুলে।
পিচ গলা প্রখর দুপুরে অগরু গন্ধা চুমোএঁকে দিলে
জ্বর জর্জর তপন তাপিত বিরস কপোলে।
কঠোর আঘাত ভোলাতে কোমল পরশ দিয়েছো ভালে
চিরচাতকের সুখসিঞ্চন তোমার নয়ন জলে।
মর্মে যখন মেঘ জমে আছে আগল দিয়েছি তুলে
মনের গোপনে মুক্তার খোঁজ তুমি নিরবে বুঝে নিলে।
সময় এখানে গিয়েছে থেমে তোমার আঁখির তলে
অঝোরে কেঁদেছো মরমে মরমে, বাছা এতোটুকু ব্যথা পেলে।
পথ চেয়ে আছে পথিকের তরে, দুয়ার রেখেছো খুলে
যদি বা সে আসে ফিরে কখনো বেভুলো মনের ভুলে।
বুকের ওপরে পাষাণ রেখেছো হৃদয় রেখেছো মেলে
স্নেহের ছায়ায় ভিজিয়ে দিয়েছো মনের মাধুরি ঢেলে।
সকল বিষাদ সিন্ধু গোপন সিন্দুকে রেখেছো তুলে
কাঁকর বিছানো পথে হরষিত অঞ্চল দিয়েছো মেলে।।