৪৮ বছরের অপেক্ষা
(স্বাধীনতাকে আমি যেভাবে দেখি-৩)
সকালের চিড়চিড়ে রোদের
প্রথম তাপ নেয়াটা নেশা হয়ে গেছে।
আমার কাচারি ঘরটার পেছনেই বিশাল মাঠ,
সেদিন কুয়াশা, নাড়া কুড়িয়ে বানানো মুড়িল থেকে
কিছু নাড়া নিয়ে আগুনটা সবে ধরিয়েছি।
ভেজা নাড়াতে আগুন হওয়ার আগে অনেক ধোঁয়া হয়,
অপেক্ষা করছি, চোখে মুখে বিরক্তিকর অপেক্ষা।
কুয়াশা আর ধোঁয়ায় চারপাশ অন্ধকার,
সূর্যের আলো এই মাঠে আসতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।
আবছা অন্ধকারে শুধু একটি মূর্তি দেখা যাচ্ছে,
কিশোরী দেহ,
আলুথালু করে শাড়ি পড়া।
এইদিকে আর কোন বাড়ি নেই,
থাকলেও এমন সকালে কেউ আসতো না।
কৌতুহল আমার পোষ না মানা জন্তু হয়ে উঠেছে।
এমন সময় আগুনটা জ্বলে উঠলো,
বুঝা গেলো কিশোরী বুঝতে পারেনি এখানে কেউ আছে।
কিছুক্ষণ আগেই নাচার মতো কেমন শরীর বাকাচ্ছিলো,
এখন সটাং দাঁড়িয়ে আছে।
ডাক দিবো?-ভাবছিলাম,
নিজে থেকেই এগিয়ে আসলো।
একি!
আমি কি এখনো স্বপ্নে?
পরী তো বাস্তব না। এমন সুন্দর কেনো হবে!
বাস্তবে আছি কিনা নিশ্চিত হতে চিমটি কাটলাম।
ঘোরের মধ্যে জোরেই কেটে ফেলেছি,
'উফ' বের হলো মুখে।
খিলখিল করে হেসে উঠলো অতিমানবী,
প্রতিধ্বনি হলো কুয়াশার প্রতিটি কণায় কণায়।
গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো,
ভয়ে নয়, অন্য রকম এক অনুভূতি।
আমি ফেলফেল করে চেয়ে রইলাম।
আগুনের আলোটা তার চুলে এমনভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে,
যেনো আগুন ধরেছে কোন বনে।
ঘাড়ের পাশ দিয়ে যেনো দ্যুতি বের হচ্ছে,
মুখ থেকে নূর,
চোখ ধাঁধিয়ে যায়।
পুরো রুপ দেখার আগেই হঠাৎ যেনো উড়ে উড়েই হারিয়ে গেলো কুয়াশায়।
এর পরপরই সূর্যের আলো এলো।
একি! এ দেখি আমার সেই বিশাল মাঠ।
কোথাও কারো চিহ্ন নেই।
না এটা স্বপ্ন হয়!
গত আটচল্লিশ বছর ধরে আমি অপেক্ষায়,
প্রতিদিন সকালে একই সময় জেগে উঠি,
প্রতি ঋতুতেই অপেক্ষা করি,
কখনো আগুন জ্বালিয়ে,
কখনো ছাতা নিয়ে,
কখনো খালি পায়ে,
কিন্তু সে আসেনা আর।
আমি অনেক দামে পুরো জমিটা কিনে নিয়েছি।
পাহারা বসিয়েছি, কাঁটাতার দিয়েছি।
সে আর আসে না!
আমি অপেক্ষা করবো, সর্বস্ব নিয়েই।
এসো কিন্তু, আমি আছি সেখানেই।
#জামশেদ
#রোমেল
মার্চের কোন একদিন, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর।