ছেলের আমার বয়স বারো, পাখী প্রেমিক যে
জন্ম হয়েও জাপানেতে বাংলাদেশী সে /
ছেলের আমার কষ্ট বড়, সঙ্গীরা সব হাঁসে
গায়ের রঙ ময়লা দেখে গা ছুঁয়ে হাত মুছে /
দিনে দিনে ছেলে আমার যাচ্ছে অনেক বেড়ে
সব ছেলেদের সঙ্গী আছে সে রয় শুধু ঘরে /
ছেলে আমার বায়না ধরে পাখি পুষবে সে
পশু নাকি পোষ মেনে যায় মানুষ মানে না যে /
এমনি করে যাদু আমার টিয়া দুইটা কিনে
খাঁচায় তাদের বদ্ধ করে খাবার কিনে আনে /
দুমাস পরে একটা পাখী ছারল ছোট বোনে
শোকের ভরে ছেলে আমার ছুটল বনে বনে /
ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে দেখে ছোটা পাখী বলে
আমায় তুই কবর দিবি কোথাও আমায় পেলে /
আমার ছেলের বড় আশা কোথায় পাবে তারে
অবশেষে দেখা দিল মরে পথের ধারে /
ছেলে আমার বড্ড পাগল কবর খোঁড়ার আশে
বলল আমায় চলনা বাজান মাটি খুঁড়ি পাশে /
মাটি আমার নাই এদেশে কি যে কি করি
পাখীটাকে কবর দিলাম টবে মাটি ভরি /
প্রথম পাখীর কবর দিয়ে ঘরে যখন ঢুকি
অপর পাখী গেছে মরি ছেলে আমার দুঃখী /
বাছা এখন বরই একা ঘুম আসে না যার
একলা ঘরে ভেজা চোখে মুখ ফোটে না তার /
মড়া পাখী স্বপ্নে দেখায় তোরা মিলে সবে
আমায় কিন্তু কবর দিবি তোদের ভরা টবে /
এমনি করে দিন কেটে যায় বাছা আমার একা
পাখী যে তার আর ফেরেনা স্বপ্নেতে হয় দেখা;
পাখীর তরে পাগল ছেলে পাখী দেখার আশে
প্রতি দিনের রুটিন মাফিক যায় সে ঘুমের দেশে /
ঘুমের দেশে দ্যাখে বাছা দুটি টিয়াই আছে
অনেক কথাই হয় তার সাথে বসে মাথার কাছে;
সব কথারই আসল কথা, মৃত পাখী দেখিস যেথা
যতন করে কবর দিবি, আমরা তোরে পাবো হেতা /
ছেলে এখন পাখী পাগল পাখীর তরে ঘোরে
স্কুল পথে চলে যখন এদিক ওদিক ফেরে;
এসব দেখে সঙ্গীরা সব তামশা্য যত মাতে
সাদা চামড়ার বন্ধুরা ওর একঘড়ে করে তাতে /
যদি কেহ আসেন হেথায় সূর্যোদয়ের দেশে
দেখতে পাবেন মরা-পচা নাহি পথের পাশে;
তবুও মোর বাছা আমার মড়া পাখীর তরে
ঘুরে বেরায় এধারওধার সাড়া দিনমান ভরে /
ঘুমের দেশে আবার দ্যাখে পাখী দ্যুটা বলে
একটা কাক পড়ে থাকবে স্কুল ফেরার কালে /
সত্যি বাছা পেল সেথা কাকের বাচ্চার মা রে,
সন্তানেরা কা কা করে তাদের মাকে ঘিরে /
কাকের মায়ের কবর দিয়ে ছেলে আমায় বলে
আর যাবনা ঘুমের দেশে পাখী দুটির স্থলে
আমি বলি কেন বাছা কিসের এত ভয় ?
বাছা আমায় বলে কেঁদে তোমার কথা যদি কয় ?
বলি আমি ভালো হবে, টবে আমায় কবর দিবি,
পাখী হয়ে পড়ে রবো, খাঁচা নিয়ে দেশে যাবি !!