সেলিনা সুবালা আলাদা দুদেশে থাকে,
মাঝখানে তার কাঁটাতারে সীমারেখা,
কুচকাওয়াজের কঠিন পাহারা মাঝে
প্রতিনিয়তই হয় দুদেশের দেখা।
সকালে যখন ভোরের সূর্য ওঠে
এদেশ এবং ওদেশে আকাশ জুড়ে,
দুদেশের পাখি একই সুরে গান গেয়ে
জীবন জাগায় দুদেশেরই ঘরে ঘরে;
সেলিনা সুবালা দুজনেরি দিন শুরু
সেই ভোরে, আর শেষ সেই কোন রাতে,
যখন দুদেশ দিনের ক্লান্তি মেখে
গড়িয়ে পরেছে নিজেদের বিছানাতে।
সেলিনা সুবালা দুজনে স্বপ্ন দেখে
পাকা বাড়ি আর সোনামাখা ধানক্ষেত,
সেলিনা সুবালা স্বপ্নতে দেখে ভাত,
সারা পরিবার হাশিখুশি, ভরপেট।
সুবালা সেলিনা সংসার জাঁতাকলে
মুখবুজে খাটে, এটাই নিয়তি মেনে,
তারি মাঝখানে বসন্ত ছুঁয়ে যায়
দুজনেরি মনে, খুশির আভাস এনে।
আজান কিংবা ঘণ্টাধ্বনির সাথে
সুবালা সেলিনা নিত্য নোয়ায় মাথা,
সেলিনা সুবালা-দুদশের বাকি লোক
সবারি জীবন সেই একই দিন-গাথা
ছন্দপতন যখন জীবনে আসে
সেও চলে সেই গতানুগতিক পথে,
মাঝে কাঁটাতার দুধারে দুখানি দেশ
দিন কেটে চলে একইভাবে কোনমতে।
যে জমির বুক চিরে গেছে কাঁটাতারে
তারি একদিকে সেলিনা দাড়ায় এসে,
সুবালা দাঁড়িয়ে অন্য দিকেতে তারি,
সুখ দুঃখের কথা বলে ভালোবেসে।
তারপরও তারা আসলে বিদেশী লোক
নিজেরাও সেটা মাঝে মাঝে ভুলে যায়,
কাঁটাতার তার হারিয়ে ফেলে যে মানে
সুবালা এবং সেলিনার আঙিনায়।
তবু কাঁটাতারে শক্ত প্রহরারত
দুদেশের সেনা সীমান্ত আগলায়,
গুলি গোলা আর কঠিন বুটের ধ্বনি,
দুদেশের বুকে হামেশাই আছড়ায়।
কেন কাঁটাতার? কবে কাঁটাতার এল?
সেলিনা সুবালা কিছুই জানেনা তার,
জীবন যুদ্ধে সেলিনা সুবালা এক
মাঝে পড়ে থাকে নির্বাক কাঁটাতার।
সেলিনা সুবালা দুজনে দুদেশে থাকে
তবুও তাদের স্বপ্নরা একাকার,
মাঝে কাঁটাতার মিথ্যে বিভেদ রচে
দুদেশে আসলে একটাই সংসার।