গল্প কবিতা:-ভালোবাসা ডুবে যায় - নীরবে
              মনোজ ভৌমিক

নদীর কূল যখন ভাঙে নদী চওড়ায় বাড়ে,কিন্তু গভীরতা কমতে থাকে।আজ আনমনে নদীর কূল ভাঙা পাড় দিয়ে হেঁটে চলেছে অরিত্র।সান্ধ্য ঈশ্বর ঢলে পড়েছে পশ্চিম দিগন্তে।একবুক নিরাশা নিয়ে জেগে উঠছে বড় চাঁদ পূর্ব পাড়ে।সান্ধ্য ঈশ্বরের শেষ রক্তিম ভালোবাসা ঢেউয়েদের বুক বেয়ে হারিয়ে যাচ্ছে নদীর অশান্ত স্রোতে।
আজ পূর্ণিমা। চন্দ্রাণীর বিয়ে।বেড়ে ওঠা চাঁদ জ্যোৎস্না,আজ যেন সূর্য-এর আগুনের মত অরিত্রের শ্রান্ত হৃদয়টাকে জ্বালিয়ে চলেছে।আজ অরিত্র হৃদয়-নদীর দু-কূল ভেঙে যাচ্ছে।
গতকাল সন্ধ্যায় চন্দ্রাণী এসেছিল।তার মায়াবী চোখে এক অসম্ভব আকুতি ছিল।চাঁদ জাগা চোখে নিদারুণ তৃষ্ণা!অরিত্র চন্দ্রাণীকে গভীর ভালোবাসে।তার হৃদয়ের প্রতিটি অনুভূতি কেবলি চন্দ্রাণীতেই সমাহিত।
অরিত্র!মধ্যবিত্ত একান্নবর্তী পরিবারের বড়ছেলে।নিজের ও অন্যান্য ভাইবোনেদের প্রতি  অকৃত্রিম আন্তরিকতা।সদ্য গ্রাজুয়েট হওয়ার প্রহর গুণছে সে।ভীষণ দায়িত্ববান ছেলে অরিত্র।সংসারের সবার অত্যন্ত প্রিয়।
কিন্তু চন্দ্রাণী!চন্দ্রাণী তার মাস্টার মশায়ের মেয়ে।সুশ্রী সুশীল ও সম্ভ্রান্ত। সদ্য ১২ ক্লাস পাশ করে কলেজে পদার্পণ। অরিত্রের সঙ্গে তার ভালোবাসার সম্পর্ক প্রায় তিন বছরের।এ বাড়ীতে চন্দ্রাণীর আসাযাওয়া আছে।বাড়ীর সবাই চন্দ্রাণীকে একপ্রকার মনে মনে চাইত।কিন্তু চন্দ্রাণীর বাবা-মা বুঝতে পেরে,শীঘ্রাতিশীঘ্র চন্দ্রাণীর বিয়ে স্থির করলো দ্বিগুণ বয়সী সরকারি চাকুরের সাথে।চন্দ্রাণী কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। মনে মনে সে অরিত্রের।গতকাল শত বাধাবিঘ্নের মধ্যদিয়েও সে এসেছিল।অরিত্রকে চন্দ্রমল্লিকার সুবাস অর্পণ করতে।
কিন্তু অরিত্র!অরিত্র ভালোবাসার পূজারী। তার প্রিয় চন্দ্রাণীর উষ্ণ আন্তরিক নিবেদেন স্বীকার করেনি।উল্টে তার পবিত্র ভালোবাসার সঠিক মর্যাদা দিয়ে,তাকে বুঝিয়েছে অনেক।কিন্তু চন্দ্রাণী প্রত্যয়ে অনড়।তার ভালোবাসার মন্দিরে একটাই দেবতা-অরিত্র।
চন্দ্রাণী উন্মাদ আবেশ নিয়ে অরিত্রকে খামচে ধরেছিলো।প্রশ্ন করেছিলো,"এই তিন বছরের প্রেম শুধুই কি কথা আর চাঁদ দেখাতেই ছিল?অরিত্র আমি যে নারী! এক সমর্পিত প্রাণ!"
অরিত্র এখনো নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখেনি আর ভাইবোনেদের ভবিষ্যৎ তার চোখে,অসম্ভব রকমের দু'দ্বিধায় অরিত্র চন্দ্রাণীকে বোঝাবার চেষ্টা করে।কিন্তু চন্দ্রাণী অবুঝ।পরিশেষে অরিত্র একবুক যন্ত্রণা চেপে চন্দ্রাণীকে চিৎকার করে বললো,"চন্দ্রাণী,আমি তোমায় কোনোদিনই ভালোবাসিনি।"
এ কথায় দগদগে আগুনে পোড়া ঘায়ের মত জ্বলে উঠলো চন্দ্রাণী।অরিত্রে গালে এক থাপ্পড় দিয়ে বললো,"কাপুরুষ! জীবনের কোনো মোড়ে আমার সামনা সামনি হবে না তুমি।আজ থেকে তোমার চন্দ্রাণী - মৃত।আমি চন্দ্রমল্লিকা।"একবুক কালবোশেখির উন্মাদনা নিয়ে চলে যায় সে।
রাত গভীর হতে থাকে।চাঁদ হেসে ওঠে।নদী স্রোতের বিকৃত আওয়াজে দূর থেকে গলাফাটা চিৎকার,"বড়- খো-কা..."
চৈতন্য ফিরে আসে অরিত্রের।কানে ভেসে আসে সাঁনাইয়ের সুর।নদীর তরঙ্গে তরঙ্গায়িত হতে থাকে চাঁদ-জ্যোৎস্না।চন্দ্রাণীর মন-বেদনা ডুবতে থাকে পশ্চিম দিগন্তে।