গল্প কবিতাঃ- উত্তর দাও হে মূক ঈশ্বর
✍️ মনোজ ভৌমিক

ঝর্ণা যখন নদী হয়ে যায় তখন হারিয়ে যায় তার উচ্ছল উন্মাদনা। হয়তো বা সমুদ্রের দুর্দান্ত প্রতাপে নয়তো বা মিলনের গভীর তৃপ্তিতে। কিন্তু এ ঝর্ণার নদী হয়ে যাওয়ার কাহিনী ও সমুদ্রের উন্নাসিকতা হৃদয় বিদারক।

ঝর্ণা সেনগুপ্ত।শিক্ষিতা,রুচিশীলা, সুশ্রী,শ্যামবর্ণা,উচ্ছল যৌবনার জীবনে পাহাড় ভাঙার আর্তনাদ শোনা যায়। বছর পাঁচেকের বড় দিদি নদীর সাথে একটি বর্ধিষ্ণু পরিবারের স্কুল মাস্টার সমুদ্র স্যান্যালের মহা ধূমধামে বিবাহ সম্পন্ন হলো।শাশুড়ী ও স্বামীর সংসার। ভীষণ আনন্দমুখর ছিল সমুদ্রের সান্নিধ্য।

কিন্তু নদী ও সমুদ্রের এই মিলনাতিশয্য বিধাতা পুরুষের বেশী দিন সহ্য হলো না। বৎসর অতিক্রান্ত হতে না হতেই নদী তার গতি পথ বদলে নিল। একদিন রাত্রিতে অকস্মাৎ মাতৃগৃহে গর্ভ যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকে।হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই নদীর প্রাণগতি স্তব্ধ হয়ে যায়।

শোকাহত সমুদ্রের মানসিক পরিস্থিতি ও সুপাত্রের ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা করে, বৎসরান্তে কনিষ্ঠা বিদুষী কন্যা ঝর্ণার মতামত উপেক্ষা করেই বাবা ও বড় ভায়ের একান্ত প্রচেষ্টায় ওকে সমুদ্রের বুকে নিক্ষেপ করা হলো। ঝর্ণা হারিয়ে ফেললো তার নিজস্বতা।অসম সমুদ্রবক্ষে কেমন অসংলগ্ন লাগছিল ওর।স্যান্যাল বাড়িতে প্রথম পদার্পণে বিধিনিষেধের গণ্ডীতে বাঁধা হলো ওকে। ঝর্ণাকে ছাড়তে হলো তার "স্বাস্থ্যসাথী"-র চাকরিটা।পরতে হলো মৃত নদীর বেশভূষা। এমনকি সিঁথির সিঁদুরটুকুও নদীর ছবি ছুঁইয়ে পরতে হয়। শাশুড়ী ও স্বামীর কঠোর বিধান। পান থেকে চুন খসলেই শাশুড়ির গঞ্জনায় স্বামীর উদ্যম প্রহার। কিছুতেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না ঝর্ণা।শুধু বাবা ও দাদার সম্ভ্রমের কথা ভেবেই মুখগুঁজে কাটিয়ে গেল একুশটা বছর।সমুদ্র আর ঝর্ণার ভ্রান্তমিলনে জন্ম নেওয়া একমাত্র পুত্র সন্তান অম্বুদ আজ কলেজের দোরগোঁড়ায়।শাশুড়ী জরাগ্রস্ত,স্বামী রিটায়ার।সংসারের ঘানি টেনে যে একটু প্রাণ খুলে হাসবে তারও উপায় নেই।সমুদ্রের সেই প্রচণ্ডতা না থাকলেও সন্দেহের গর্জন অহেতুক শোনে ও।এমনকি এই যৌবন সায়াহ্নেও কোনো পুরুষের সাথে কথা তো দূর,ফোনকলটাও তার  সামনে করতে হয়।এমনকি পুত্র অম্বুদের শরীরেও পিতার রক্তের প্রাধান্য।গভীর আত্মগ্লানি নিয়ে আজ একবিংশ শতাব্দীর ঝর্ণা পর্বতের সামনে প্রশ্ন করে, " নারী আপন ভাগ্য জয় করবে কবে? উত্তর দাও হে মূক ঈশ্বর?