গল্প কবিতা :- হারিয়ে গেলো মিলির খুশি
মনোজ ভৌমিক
°°°°°°°°°°°°°°°°
সামান্য ক্ষত খুব সহজেই মিলিয়ে যায়। কিন্তু ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা আত্মিক সম্পর্ক যখন হঠাৎ ভেঙে পড়ে,তখন হৃদয়ে গভীরে... গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
বৈশাখের বিকেল...দিগন্ত জুড়ে কালো মেঘের ঘনঘটা । ছোট্ট মেয়ে মিলি আকাশের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে...বাচ্চাটিয়ার ডাকে মিলি দৌড়ে গেলো ঝড়ের দাপট উপেক্ষা করেই...নীড়হারা মা টিয়া শাবকটিকে দুটি ডানায় জড়িয়ে চিরঘুমে ঘুমিয়ে গেছে...মাতৃহারা শাবকটির চোখে অজানা আশঙ্কার ডাক! বৃষ্টি নামার আগেই মিলি ছোট্টটিয়াকে নিয়ে দুয়ারে এসে ঝরঝর করে কাঁদতে থাকলো।সকলের জিজ্ঞাস্য ," মিলি, কোথায় পেলি?"
কান্নাজড়ানো গলায় মিলি বললো," ওর মা আর নেই।
মা হেসে বলে," আজ থেকে তুই ওর মা।"
মিলির চোখ খুশিতে চকচক করে ওঠে।
সেদিন থেকে মা-মিলি বাচ্চার নাম রাখলো "খুশী।"
বাড়ীর সব্বাই মিলির মাতৃত্বে অভিভূত।
খুশির বেড়ে ওঠার প্রতিটা মুহুর্ত মিলি উপভোগ করে । বইয়ের ব্যাগটা রেখেই মাকে হাজারো প্রশ্ন...কারণ, স্কুলের সময়ে খুশীর দায়িত্ব মায়ের।
খুশির ডানা দুটিতে পালক গজালো । মিলির মনে কত ভাবনা।খুশি ওর সঙ্গে শিস দিয়ে কথা বলবে! ওকে "মা" বলে ডাকবে। একটু উড়ে গিয়ে আবার ফিরে আসবে...মিলির আনন্দ ধরে না। মাসখানেক পরে খুশি একটু উড়তে শুরু করলে মিলি আনন্দে পাগল!
...."মিলি,ওকে এবার খাঁচায় বন্দী কর।নইলে ও উড়ে যাবে।"
... ওকে বন্দী করব না মা , আমার ছানা স্বাধীনভাবে বাঁচুক ।
কথাটা শুনে খুশী যেন বলছে,"মিলি.. মাআআআ.."
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা মিলি । বাড়ী শুদ্ধ লোককে ডেকে আনন্দ জাহির করতে থাকে...কিন্তু মিলি বোঝে না...খুশীর আসল খুশী মুক্তোকাশ!
একদিন বিকেলের নির্মল শান্ত আকাশে একদল সতীর্থের সাথে ডানা মেলে দিল খুশী....মিলির হাজার ডাকেও ফিরে এল না ।
শয্যাশায়ী মিলি নিষ্পলকে তাকিয়ে থাকে নীলাকাশে একবুক আশা নিয়ে....