গল্পকবিতাঃ-একদিন সন্ধ্যাবেলা
মনোজ ভৌমিক
সন্ধ্যা যখন ঘনিয়ে আসে, নেপথ্যে রাত তখন ইশারা করে।অরিত্র,জীবনের এই গূঢ় রহস্য ভালো রকম বোঝে।তবুও সে রাত ভেদী জানালা খুলে,মুঠোফোনে করবীর মন বাগানে উঁকি মারে।কেন? কি কারণে?লোকসমাজে এ এক অবৈধতা ছাড়া আর কিছুই নয়।কে বোঝাবে ওকে এই বস্তাপচা অনুশাসনিক আন্তরিকতা আজকাল ব্রাত্য?
অবুঝের মত সেদিন সাত সকালে করবীর মন দরজায় প্রতিবাদী কড়া নাড়তে গেছিলো সে।
কেন খুলবে সে!এখন সে যে সোশাল মিডিয়ার দাপটে মন ভ্রমরের কাছে পাপড়ি মেলে ধরেছে।অরিত্রের আন্তরিক ভাবনাকে তাই সে আজ অন্য চোখে দেখে।
তাচ্ছিল্য আর অবজ্ঞায় তাড়িয়ে দেয় মনের দুয়ার থেকে।বুঝেও বুঝলো না অরিত্রের আন্তরিকতাকে।বিমর্ষ অরিত্র ফিরে যায় একরাশ যন্ত্রণা নিয়ে বুকে।আর তাকায়নি সে করবীর মনোরঞ্জিত আবেশি ভাবনার দিকে।
অরিত্র ভুলে যেতে চায় বেড়ে ওঠা সম্পর্কের পুরাতন ব্যথা কথা।আজ সে সুদূর নীহারিকায় চোখ রাখে।ব্যর্থ অনুভূতির তারা গোনে।
ধীরে ধীরে সময় গড়িয়ে যায়, অরিত্র প্রৌঢ়ত্ব ছাড়িয়ে বার্ধক্যের দোর গড়ায়।শরতের বৈকালিক রোদ্দুর গায়ে মেখে,হেঁটে চলেছে জনবহুল শহরের পার্কের রাস্তায়।হঠাৎ পিছন থেকে আন্তরিক ডাক,"অরিত্রদা না?"
অরিত্র পিছনফিরে তাকিয়ে দেখে,হুইল চেয়ারে বসা এক শীর্ণকায় ভদ্র মহিলা! কেন সে তার নাম ধরে ডাকে?সামনাসামনি হতেই একেবারে ভুত দেখার মত চমকে ওঠে সে।"ক-র-বী! একি দশা হয়েছে তোমার?"
"ম্যসিভ এটাকের পর আমার এ অবস্থা অরিত্রদা।ডাক্তার জবাব দিয়েছে আমি আর উঠে দাঁড়াতে পারবো না।আমি বাঁচতে চাই অরিত্রদা।আমি মরতে চাই না।"
অরিত্রের দু'চোখে নদী বহে চলছে।অহংকার আর আতিশয্যকে আজ চোখের সামনে যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখছে সে।করবীকে সে বোনের মতই ভালোবাসতো আর আজও বাসে।কেবলি পুরাতনী প্রেমে-স্মৃতির কিছু সাদৃশ্যের কারণে ওর কাছে ছুটে যেতো সে।
কিন্তু হায়! আজ সত্যিকারের সন্ধ্যা গড়িয়ে তমসাচ্ছন্ন রাত্রির ইশারায় করবী। জীবনের সকল আবেশি মূল্যবোধ হারিয়ে স্মৃতির গহ্বর তোলপাড় করে,নিজকে খুঁজতে খুঁজতে হুইল চেয়ারে ডুবে যায় রাত্রির প্রগাঢ় অন্ধকারে।পার্কের কিছু আলো নিভে যায়। ছোটো ছোটো ঝোপগুলিতে জেগে ওঠে জোনাক জ্বলা রাত্রি।