শেষরাতে ফোঁটা গোলাপকে প্রশ্ন করেছিলাম;
হে গোলাপ, 'ভালোবাসা কী?'
গোলাপ তার সমস্ত সুঘ্রান নিংড়ে
তোমার নাসিকা ইন্দ্রিয়ে আলোড়ন তুলে বলেছিলো,
এই হলো ভালোবাসা!
প্রথম সকালের সূর্যকে প্রশ্ন করেছিলাম;
হে সূর্য, 'ভালোবাসা কী?'
মোনালিসার মতো হাসি লেগে থাকা তোমার মুখে
সূর্য তার প্রথম আলো ফেলে বলেছিলো,
এই হলো ভালোবাসা!
অসীম আকাশকে প্রশ্ন করেছিলাম;
হে আকাশ, 'ভালোবাসা কী?'
আকাশ তাঁর অসীমতাকে বিসর্জন দিয়ে
তোমার হৃদয়ে প্রবেশ করে বলেছিলো,
এই হলো ভালোবাসা?
দ্বিতীয় প্রহরের বর্ষাকে প্রশ্ন করেছিলাম;
হে বর্ষা, ভালোবাসা কী
তোমার লতার মতো শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে নৃত্যরত জল
টুপটাপ ঝরিয়ে দিয়ে বর্ষা বলেছিলো,
এই হলো ভালোবাসা!
ক্ষত-বিক্ষত বাদামের খোসাকে প্রশ্ন করেছিলাম,
হে খোসা, 'ভালোবাসা কী?'
তোমার অবসরের অত্যাচারে পিষ্ট হওয়া খোসা
তার আবরণ খুলে ক্ষত চিহ্ন দেখিয়ে বলেছিলো,
এই হলো ভালোবাসা!
আমি প্রশ্ন করেছিলাম চাঁদ-তারা-রাত্রিকে,
শীত-কুয়াশা-শিশিরকে। এমন আরো-আরো অনেককেই;
'ভালোবাসা কী-ভালোবাসা কী?'
এমনকি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের কবিতাও রেহাই পায়নি!
অথচ এরা সবাই শুধু তোমাকেই দেখিয়ে বলেছিলো,
এই হলো ভালোবাসা!
অবশেষে তৃষ্ণার্ত ঠোঁটে তোমাকেই প্রশ্ন করেছিলাম;
হে বালিকা, 'ভালোবাসা কী?'
আর তুমি? কৃষ্ণপক্ষের চন্দ্রাহত রাত শরীরে নিয়ে
কমলালেবুর হৃষ্টপিষ্ট খোসা এ ঠোঁটে পুরে দিয়ে
খুলে দিয়েছিলে নিষিদ্ধ সব দরজা-পবিত্র সব জানালা
জলে ও আগুনে সৃষ্ট হাহাকার বুকে নিয়ে বলেছিলে,
এই হলো ভালোবাসা!
অথচ আমি? দিগভ্রান্ত নাবিক তখনো বুঝিনি,
'ভালোবাসা কী?'
তারপর বহুকাল কেটে গেছে সন্ন্যাসী বেশে
নিমগ্ন ধ্যানে আচ্ছন্ন হয়ে খুঁজেছি একটিই উত্তর;
'ভালোবাসা কী?'
অথচ এখন আর কোথাও তুমি নেই!
এখন বাতাসে কান পাতলেই শুনি-
তুমি নেই, এই হলো ভালোবাসা!