পৃথিবীর সব আলো মুছে দিয়ে
নেমে আসে ভয়ানক নেশাতুর সন্ধ্যা
সাত জনমের কষ্ট নিয়ে জেগে উঠে শুকতারা
আত্মাহুতির মন খারাপে আমার মৃত্যুর পথে চলা!
এক ঘন ঘোর বরষার সকালে এসেছিলাম এ'ধরাতে
মরিতে চাই আমি কাশফুলে ছেঁয়ে যাওয়া শরতের সন্ধ্যার আঁধারে।
রাখালের বাঁশির সুর থেমে গিয়ে ঘরে ফেরার গোধূলী আসে
গ্রাম্য বধূ উঠোনের চুলোর হাঁড়িতে ভাত চড়িয়ে পুঁইশাক কাটে
কৃষক স্বামী হয়ত এখনি ফিরবে হাট থেকে নুনটুকু নিয়ে
শ্বেত দাঁড়ির বৃদ্ধ বাবা তালপাতার টুপি মাথায় ছুটে যায় মসজিদ পানে
সন্ধ্যা হয়েছে তবু ঘরে না ফেরা ছেলেটির অপেক্ষায় মায়ের উত্কন্ঠার বকবকানি বাড়ে
মরিতে চাই আমি এমনি গ্রামীণ বাংলায় নেমে আসা সন্ধ্যার আঁধারে।
অফিস ফেরত ক্লান্তিগুলো আটকে থাকে শহরের বাসে বাসে
স্টেশনে নেমে আসে কৃত্তিম আলোর কোলাহল
হকারের হাঁকে নিম্ন-মধ্যবিত্তের প্রয়োজনে বেড়ে যায় ব্যস্ততার ফুটপাতে ফুটপাতে
সোডিয়ামের আলোয় আলোকিত শহরের লুকোনো সন্ধ্যার আঁধারে
হৈ-হুল্লোড় আর উন্মাদনার মঞ্চে মরাকান্নার ব্যাকগ্রাউন্ড সুর বাজে
মরিতে চাই আমি রংচটা শহরের সন্ধ্যার আঁধারে।
চায়ের কাপে বন্ধুদের আড্ডা শুরু যে সন্ধ্যার আঁধারে
ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় স্বপ্নেরা শূন্যে ভাসে সন্ধ্যার সে আঁধারে
নষ্ট নগরীর পথে পথে মাতালেরা মেতে উঠে মাদকের ছোবলে
নিশিকন্যারা গালে নষ্টের রং মাখে আঁধারের রাণী হতে
নষ্ট শাসকের নষ্টামী শাসনে ধ্বংসের আঁধারে নষ্ট সন্ধ্যা আসে
মরিতে চাই আমি এমনি নষ্ট সন্ধ্যার ধ্বংসের আঁধারে।
যাযাবরের সমস্ত দিনের পথ চলা থেমে আসে সন্ধ্যায়
নীড়ে ফেরা পাখি পথ ভুলে আঁধারে হারিয়ে যায়
শান্ত নদীর বাঁকে বাঁকে মিশে যায় বেদনার রং
সন্ধ্যাপ্রদীপ হাতে পূজারীর নিমগ্ন ধ্যানে নেমে আসে
কোনো নারীর বুকে করুণ হাপিত্যেশ
মরিতে চাই আমি নীরবে এমনি সন্ধ্যার আঁধারে।