কেউ একজন একটা চিঠি লিখুক
একটা পৃষ্ঠা নিক সে টেনে-
যেভাবে কেউ খুব কাছে টানে; হ্যাঁচকা-টানে আপনজনকে,
ভাঁজ করুক ডানে বামে,
যেমন ভাঁজে বই'এ জন্মে ময়ূর পালক।
তাথাপি,
যদি কিছু লেখবার না থাকে
তবে যেন খালি রেখেই সমাপ্ত করে চিঠি।
ও’টা আমা পর্যন্ত পৌঁছলে ছোটবেলায় শেখা খালিঘর পূরণের মত
কিছু শব্দ ও'তে আমি দিয়ে দেব,
খালি ঘর পূরণে জুড়ি আমার নেই।
কখনো কারও ঘরের চালা ফুটো হয়ে জল গড়ালে
ছন হয়ে কাটিয়েছি রাত,
কারওবা রাত্রি বেলায় অসুখ হলে ওম হয়েছি জ্বরের ঘোরে
ডাক্তারের মতন গলায় বুকে আঙুল ডুবিয়ে মেপেছি জ্বরের মাত্রা
বুকে কান পেতে শুনেছি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস;
তারপর, তালুর মধ্যে আঙুল রেখে পেন্সিলের মত ক'রে লিখেছি ব্যবস্থাপত্র।
পরীক্ষার হলে ঢোকা তড়িঘড়ি ছাত্রের মত বইয়ের পাতায় শেষবারের মতন চোখ বুলিয়ে-
প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর যেভাবে লেখে ১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর (ক);
তারপর ভুল করে লিখে বসে পেছনের পাতা থেকে ৬ নম্বর প্রশ্নের শেষ উত্তর,
সেভাবে কেউ লিখুক এপিঠ ওপিঠ উল্টেপাল্টে – ভুলে-ভালে;
ভুল করা বানানে, ভুল ভাবা কথায়
আর
ভুল মানুষের কথা শুনে বড্ড অভ্যস্ত আমি।
দাপ্তরিক চিঠিপত্র যেরকম হয়,
কার কাছে লিখছি -
কেন লিখছি-
কখন লিখছি-
তারিখ -
স্মারক নাম্বার-
কম-মূল্যের ডাকটিকিট -
চিঠির শেষে সদয় অবগতির জন্য সংযুক্তি;
সেরকম সরকারি নীল খামে হলেও কেউ লিখুক অন্তত কিছু আদেশ - বিধিনিষেধ
অথবা তাৎক্ষণিক বদলি কিংবা স্থগিত অর্ডার।
এমন চিঠি কে লিখবে আমায়?
যেরকম চিঠি-
প্রেমিকা লেখে প্রেমিক’কে-
বাবা লেখে সন্তানের কাছে
স্ত্রী লেখে স্বামীর কাছে
বন্ধু লেখে বন্ধুর কাছে
শত্রু লেখে শত্রুর কাছে
মেঘ লেখে বৃষ্টির কাছে
পাহাড় লেখে সমুদ্রের কাছে
প্রদীপ লেখে শিখার কাছে
মংলা লেখে ভেনিসের কাছে।
আমার জন্য কে লিখবে এমন চিঠি -
যে চিঠিতে আমি থাকব না!
কে লিখবে এমন চিঠি?
যে চিঠিতে সে থাকবে না!
কে লিখবে এমন চিঠি-
যে চিঠিতে শব্দের বদলে জলছাপ থাকবে-
নিত্য এমন পুরানো চিঠি কে লিখবে আমার কাছে?
যে চিঠিতে সমুদ্র-গন্ধী বাতাস থাকবে।