বাক্স পেটরা বেঁধে ভ্যানে করে সবে নেমেছি- একুশের দুই/পাইকপাড়া-
শ্রাবণে-পৌষে সবে মাস চার- ছিলাম বিহারি-পল্লী;
আজ এই এলাকা তো কাল ঐ মহল্লা-
পোয়াতি মাছেদের মত আমিও খুঁজছি একটি নিরাপদ অভয়ারণ্য-
চাই একটু স্বস্তি আর দম ফেলে থাকা।

শেলফ তাক জামা জুতো জলের ফিল্টার কেবল উঠছে ঘরে-
দো’তালার সিঁড়িতে দেখা হল ম্যানেজার নওরোজ আকবর।
- বেশ ! বেশ ! উঠে গেছেন? তা গুছিয়ে নিন সন্ধ্যেয় আসব একবার
তে’তলা নিরিবিলি আছে, পুবে আলো, দক্ষিণ খোলা-
উত্তরে একঘর আছে- একলা থাকে, শুনেছি কবি! তবে নির্ঝঞ্ঝাট!


মস্ত সে গুণী কবি-
নাম নেই ডাক নেই- গাড়ি নেই নারী নেই-
কাগজে লেখা নেই- স্লোগানে স্লোগানে ঝড় আসে না-
কেবল দিন আসে - রাত যায়;
শ্রাবণ মেঘ করে- বাদল ঝড়ে--
বর্ষার কিছু শব্দ শুনি- গ্রীষ্মের উত্তাপ বুঝি
কিন্তু পাশের ঘরের কবির কবিতা শুনি না।
একই পথে যাই আসি- অন্ধকারে চলি-ফিরি- অথচ,
পাশের ঘরের কবির সাথে আমার দেখা হয় না।

মনে মনে অস্বীকার করি নিজের দীনতা-
যেন আমার অন্তঃসার শূন্য- নিজেকে প্রকাশ করতে পারি না গানে অথবা শব্দে
এমন কেন হল-
আমার অভ্যন্তরে দাবানল, অথচ আমার হৃদয়ে নেই রক্ত;
কেবলই আমার মনে হয়েছে-
সমুদ্রের কাছে যাওয়া যায়- অরণ্যে যাওয়া যায়
মা’এর কাছে যাওয়া যায়- কিন্তু কবির কাছে যাওয়া যায় না।

তারপর-
একদিন টুথব্রাশ খুঁজতে গিয়ে বেলকনিতে দেখি অনেক লোকের ভিড়!
একুশের দুই/পাইকপাড়া- এত লোক কেন এখানে?
এত মানুষ তো কখনো দেখিনি এই গলিতে- কবির ঘরের সামনে!
দেখিনি- জীবদ্দশায় কেউ খুলেছে কবির ঘরের দ্বার;
দেখিনি - হিন্দু কবিতায় জায়নামাজ; আর মুসলমান কবিতায় কুমোরটুলি,
অথচ মদের গ্লাস যিশুখ্রিস্টের ক্রস এড়িয়ে দু’পক্ষেই যায়।
এরকম এত মাতাল মানুষ কখনো দেখিনি আগে।

পূর্বে হবে না পশ্চিমে? - উত্তরে না দক্ষিণে-
কুরানে না পুরাণে- গোলাপজল না গঙ্গাজল?
ঈশ্বর আর কবি বাদে -
‘মৃত্যু’ নিয়ে খামখেয়ালী কে করেছে কে জানে!

বাণের ভয়ে জলে যাই না-
সে’ আমারই হল ঘর- সমুদ্রের মোহনায়!
পাশের ঘরে কবি? কেন? পাশের ঘরেই কেন?
পাশের গলিতে হতে পারত, পাশের মহল্লায় হতে পারত- পাশের দেশে হলেও হোত;
কিন্তু পাশের ঘরেই--- কবি!