হৃদয়ে আবার কাঁপন – একটা ঠিকানার কি এক তৃষ্ণায়
মনে হয় আবার এসেছে ফিরে আরেক শীতকাল;
পশ্চিম আফ্রিকার সব তাপমাত্রা নিজের মধ্যে টেনে নিয়ে
আমি কি এক প্রাণপণ লড়ে যাচ্ছি
নিজের ভেতরের রক্ত প্রবাহকে কিছুটা উষ্ণ রাখতে!
তবু কেন যেন ঠাণ্ডায় আমার ভেতরের সাদা মেরু ভালুকটা
কেমন যেন নিজের শেষ নিঃশ্বাস গুলো টানছিলো।

ওদিকে আন্তর্জাতিক উষ্ণতা কমিটির কাছে চিঠি লিখে একটু বেঁচে থাকবার জন্য আগুন, দেশলাই আর রসদ চাইবো বলে
লিখতে গিয়ে দেখলাম আমার আসলে অনেকদিন ধরে কোনও পেন্সিল নেই,
কাগজ নেই।
জমানো রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত চিঠিপত্র, আন্তর্জাতিক স্মারক ও ফরমান যাকিছু ছিলো-
সেগুলো পুড়িয়েই এই শেষ ক’টা মাস নিভু নিভু আঁচে বেঁচে আছি।

সে চুল্লির আগুনটা আরেকটু ঠেলে দিতে অথবা
আরও একটুকরা গোল কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতেই বোধয় পেন্সিলটাও খোয়া গেছে।
যাক সে কথা- কত আগের কথা মনেও নেই।

হিম ঠাণ্ডা শীতলতায় আর মানুষের নির্লিপ্ততায় যেভাবেই হোক-
মরে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে মনে হয়েছিল
যেন একবার বেঁচে উঠতে পারছি।
যেন একবার আবার হাতের আঙ্গুলে রক্তপ্রবাহ বইছে,
যেন আবার একটা শেষ চিঠি লিখে যেতে পারবো;

এমনই একটা আশ্বাস জানিয়েছিলো মস্তিষ্ক আর হৃদয়ের সমস্ত প্রকোষ্ঠ
মনে হয়েছিল দুই হাতের কব্জি থেকে,
বাহুর শিরা ধমনী থেকে,
স্নায়ু থেকে তুমুল বেগে জলোচ্ছ্বাসের মতন বয়ে আসছে রক্ত।

আজ মনে হচ্ছে আর কোনও দ্বিধা নেই,
কোনও সঙ্কোচ নেই;
কারও আসবার অথবা যাবার অপেক্ষা নেই।
নিজের এত তুমুল রক্তপ্রবাহের উত্তেজনার মধ্যেও
নিজেকেই যেন নিজের সবচেয়ে কাছের নির্লিপ্ত মানুষ;
এই প্রথম যেন মানুষের মুমূর্ষুও অবস্থায়ও কোনও মানুষের ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা
আর
নির্লিপ্ততা ভালো লাগতে শুরু করলো।

ভালোলাগার এই রেশ কেটে যাওয়ার আগেই মনে হলো আমার প্রায় সাড়ে তিন হাজার চিঠি লেখা বাকী।
স্মারক চিঠি, জাতীয় চিঠি, আন্তর্জাতিক চিঠি, ব্যক্তি মালিকানায় চিঠি, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি, ব্যক্তিগত চিঠি আর নৈর্ব্যক্তিক চিঠি;
অনেক চিঠিই লিখতে হবে এই অচেনা, চেনা ও অজানা মানুষের ঠিকানায়।

যে চিঠি লিখবার আকাঙ্ক্ষা পুষে রেখেছি মনের মধ্যে
অথচ কিসের এক সাহসের অভাবে লিখে উঠতে পারিনি সে চিঠি-
কিংবা লিখে ফেলতে পারলেও যে অজানা ভয়ে পাঠাতে পারিনি,
আজ মনে হচ্ছে সে ভয় নেই একদম নেই।

মনে হচ্ছে আজ শুধু ব্যক্তিগত মানুষ পর্যায়ে নয়,
আজ যেন নিজের সব কথা লিখে
জাতিসংঘেও পাঠাতে পারবো একটা স্মারক চিঠি।