আল মাহমুদ (জন্মঃ ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ) আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। তিনি একধারে একজন কবি, ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্প লেখক।

কবি আল মাহমুদ ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম মীর আব্দুস শুকুর আল মাহমুদ। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কবি। আল মাহমুদ বেড়ে উঠেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।


কবিতার জন্য তাড়া খাওয়া আল মাহমুদকে পুলিশ হন্য হয়ে খুঁজছিল। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ভাষা আন্দোলন কমিটি’র একটি লিফলেটে তার চার লাইনের একটি কবিতা ছাপা হয়েছিল। তাতে তাকে পালিয়ে যেতে হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে। সেই পলায়ন যে বাংলা সাহিত্যের অমর গহ্বরে ঢুকে যাবে, স্থায়ী মর্যাদার আসনে তাকে অধীষ্ঠিত করবে তা কেউ কি সেদিন কল্পনা করতে পেরেছিল। সেই মানুষটিই তার পথ চলাকে সার্থক করেছেন। নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে মেলে ধরেছেন। তাই আজ তিনি হয়েছেন কবিতার সম্পদ। বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।
কবি আল মাহমুদের কর্মজীবন: সংবাদপত্রে লেখালেখির সূত্র ধরে কবি ঢাকা আসেন ১৯৫৪সালে। সমকালীন বাংলা সাপ্তাহিক পত্র/পত্রিকার মধ্যে কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী সম্পাদিত ও নাজমুল হক প্রকাশিত সাপ্তাহিক কাফেলায় লেখালেখি শুরু করেন। তিনি পাশাপাশি দৈনিক মিল্লাত পত্রিকায় প্রুফ রিডার হিসেবে সাংবাদিকতা জগতে পদচারণা শুরু করেন। ১৯৫৫ সাল কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী কাফেলার চাকরি ছেড়ে দিলে তিনি সেখানে সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। কাব্যগ্রন্থ লোক লোকান্তর(১৯৬৩) সর্বপ্রথম তাকে স্বনামধন্য কবিদের সারিতে জায়গা করে দেয়। এরপর কালের কলস(১৯৬৬),সোনালি কাবিন(১৯৬৬), মায়াবী পর্দা দুলে উঠো(১৯৬৯) কাব্যগ্রন্থ গুলো তাকে প্রথম সারির কবি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করে। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি গল্প লেখার দিকে মনোযোগী হন। ১৯৭৫ সালে তার প্রথম ছোট গল্পগ্রন্থ পানকৌড়ির রক্ত প্রকাশিত হয়। ১৯৯৩ সালে বের হয় তার প্রথম উপন্যাস কবি ও কোলাহল। আল মাহমুদ সাংবাদিক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরে তিনি দৈনিক গণকন্ঠ পত্রিকাত সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। তিনি স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সময় একবার জেল খাটেন । পরে তিনি শিল্পকলা একাডেমীতে যোগদান করেন এবং পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।

আল মাহমুদ একজন আধুনিক কবি। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি। তার কবিতায় অন্তর মোড়া। তিনি নিজেই কবিতায় সজ্জিত। তিনি গোটা জীবনের সময় কবিতার,গল্প,ছড়া,জন্য ব্যয় করেছেন। কবিতার পিছু ছুটেছেন। বর্ষায় বৃষ্টির মতো আজ বাংলা কবিতার সাথে তার সম্পৃক্ততা বাঁধা পড়েছে। আপন মহিমায় মনের মাধুরী মিশিয়ে সাহিত্য জগৎ মধে্য দিয়ে এক স্বতন্ত্র নদী মৃত্তিকার বুকে সৃষ্টি করেছেন। যেখানে পৌঁছেছেন সেখান থেকে কেউ তাকে আর ফেরাতে পারবে না। তাকে সরানোর কল্পনা করা অসম্ভব তিনি নিজেই নিজেকে এতদিন যেভাবে মেলে দিয়েছেন এখন তার কলমের কালি কবিতা গল্পের রসে সিক্ত। গদ্যে পদ্যে তিনি রুচির মিশ্রণ ঘটিয়েছেন। কবিতার পাশাপাশি তার ছড়াগুলো সব সময় জীবন্ত বলেই মনে হয়।

কবি আল মাহমুদের প্রকাশিত গ্রন্থ:

লোক লোকান্তর (১৯৬৩)
কালের কলস (১৯৬৬)
সোনালী কাবিন (১৯৬৬)
মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো (১৯৭৬)
আরব্য রজনীর রাজহাঁস
বখতিয়ারের ঘোড়া
Al Mahmud In English
দিনযাপন
পাখির কাছে , ফুলের কাছে
প্রেম ও ভালোবাসার কবিতা
প্রেম প্রকৃতির দ্রোহ আর প্রার্থনা কবিতা
প্রেমের কবিতা সমগ্র
উপমহাদেশ
বিচূর্ণ আয়নায় কবির মুখ
উপন্যাস সমগ্র-১
উপন্যাস সমগ্র-২
উপন্যাস সমগ্র-৩
ত্রিশেরা[৪]
উড়াল কাব্য[৫]
জিবরাইলের ডানা
গল্পসমগ্র
প্রেমের গল্প
যেভাবে গড়ে উঠি
কিশোর সমগ্র
কবির আত্নবিশ্বাস
কবিতাসমগ্র
কবিতাসমগ্র-২
পানকৌড়ির রক্ত
সৌরভের কাছে পরাজিত
গন্ধ বণিক
ময়ূরীর মুখ
না কোন শূণ্যতা মানি না
তার কবিতার স্বীকতি তিনি পেয়েছেন। কালের কলস আর লোক-লোকান্তর, মাত্র দুটি কবিতা বই প্রকাশের পর কবিতার জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৮)। পেয়েছেন জয়বাংলা পুরস্কার (১৯৭২), হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৪), জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি পুরষ্কার (১৯৭৪), সুফী মোতাহার হোসেন সাহিত্য স্বর্ণপদক (১৯৭৬), ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬), একুশে পদক (১৯৮৭), নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৯০), সমান্তরাল (ভারত) কর্তৃক ভানুসিংহ সম্মাননা পদক- ২০০৪, কবি গোলাম মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন পুরস্কার (২০০৬) সহ অনেক সম্মাননা।

কবি আল মাহমুদের ৮০ তম জন্ম দিনে বাংলা কবিতার সভাইর পক্ষ থেকে কবিকে জানাই লাল গোলাপের শুভেচ্ছা ।