একদল হিন্দুধর্মাবলম্বী মুসলমানবিদ্বেষহেতু 'পানি'-কে বাংলা শব্দ না মেনে, উর্দু থেকে আগত বলে, 'ওরা বাঙালি নয়'— বলে কটাক্ষ করছিল ফেসবুকে। আমি প্রতিবাদহেতু এই কবিতাটি মন্তব্যে লিখি; কোনো ধর্মের ভাবাবেগে আঘাত করা কখনই আমার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল না, আজও নেই। তবুও কিছু ভুল-ত্রুটি হলে আগে থেকে ক্ষমাপ্রার্থী!
তাদেরি বাপের লেখা শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে
জল নাই, অনাগত, পাণী চনমনে।
যদিও পাণী আজ হইল পানি,
অর্থ তারি অভিন্ন, তা সবে জানি।
জলের বহুকাল আগে
পাণী এসেছিল বাংলার ভাগে।
তাদেরি বাপ ব্রাহ্মণ সুনীতির মতে
শুধুই পাণী ছিল চর্যাপদে।
কবিতায় প্রয়োগ করি এণ
চর্যাপদের কবি ভুসুক রচেন
"তিণ ন চছুপইী হরিণা পিবই ন পাণী।
হরিণা হরিণির নিলঅ ণ জাণী॥"
মানে, 'ধৃত হরিণ প্রাণভয়ের হতভম্বতায় ত্রাসে
করে না পানি পান, দেয় না মুখ ঘাসে।'
তাদের ভগবান কেষ্টর গুণগানে
চাহিল কবিবর পাণীরই পানে।
খুলিয়া আবেগ-ভরা দিল
তাই তো সে লিখিল
"আঝর ঝরএ মোর নয়নের পাণী।
বাঁশীর শবদেঁ বড়ায়ি হারায়িলোঁ পরাণী।"
এতকিছু আছে তবু মানবে না জানি।
পানির 'পরে তাদের রবে চুলকানি॥
জানি তো যে মুসলমানবিদ্বেষহেতু
চিরকালই উড়াবে দ্বেষমাখা কেতু॥
অরণ্যে রোদন তাদের হবে যে ঠিকই সাঙ্গ
পানিই জল, জলই পানি, যেমতি চৈতন্যই গৌরাঙ্গ॥
— ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ —
— কলকাতা- ৭০০০১০, বুধবার —
— রাত্রি —