যেমন করে গাঁয়ের কিষাণ
মাঠের বুকে ওড়ায় নিশান;
যেমন করে হিয়ার বুকে
প্রলয়নেশায় মহাসুখে
ঝড় তুলে যায় বিরহ এসে;
সপ্তদ্বীপার মহাসনে বসে
চিত্রকর যেমন করে
চিত্র আঁকে প্রিয়ারে স্মরে;
যেমন করে মুক্ত পাখি
নয়ন-পাতে রেখে আঁখি
উল্লসিয়া বেদন ঢাকে
সাড়া দিয়ে প্রিয়ার ডাকে;
যেমন করে নদীর জলে
হিজলপাতা দাপিয়ে চলে;
যেমন করে বনের হিরণ
গায়ে মেখে রবির কিরণ
আনন্দিয়া ওঠে নেচে;
নিজের জিনিস লাভে বেচে
যে ব্যাপারি বিস্ফারিত নয়ন তোলে
ক্ষণিকের মহাসুখে সারা জনমের কষ্ট ভোলে;
'যেমন করে বীর ডুবুরি সিন্ধু সেঁচে মুক্ত আনে';
যেমন করে বিবাগি হিয়া ফিরে আসে প্রেমের টানে;
যেমন করে পান্থশালায়
ঝড় তুলে গো পান্থ পালায়;
যেমন করে আঁখির পাতে
অশ্রু ঝরে গভীর রাতে
প্রিয়জনের প্রেম-বিরহে
দুঃখের পবন মাতিয়ে বহে;
যেমন করে শুক্ল রাতে
চন্দ্রিমা আসে দুঃখ মিটাতে;
তেমন করে তোমায় আমি কেমন যেন চাই,
বামন আমি চাঁদ পাব না জেনেও যেন পাই,
যদি বলি পথ হব, পান্থ কি তার হবে?
পাথেয় তব হস্তে লয়ে আমার বুকে রবে!
যদি বলি আকাশ হব, চাঁদ হবে কি তার?
লবে কি গো মোর ভূবনে জোছনা দেবার ভার?
যদি বলি শরৎ হব, শিউলি হয়ে ফুটবে?
আমার আকাশ আলো করে রবির মতো উঠবে?
উত্তর আমি চাই না কোনো বন্ধু ওগো আমার,
জানো তো তুমি স্যাকরা হতে পারে না কভু চামার!
বাঁদর যদি মুক্তার মালা পরে আপন গলে,
মানাবে কি তারে, বন্ধু বলো, কভু কোনো পলে?
উল্লাসে যদি উঠিয়া মাতি
শীর্ণ দেখায় বুকের ছাতি
হাসবে না গো তুমি?
যদি আমার মতো চুনোপুঁটি কেউ সাজতে চাহে রুমি,
বলো, হাসবে না?
একটুখানি ক্রুর হাসি হেসে সুখের জোয়ারে ভাসবে না?
উত্তর আমি চাই না গো, বন্ধু আমার ওরে,
বেশ তো আমি ভালোই আছি প্রকৃতির প্রেমে পড়ে,
রোজই দেখি সুবহে সাদিক, প্রভুর প্রেমে পড়ি তার!
ইহার কাছে মূল্যহীন রাশিরাশি হেমের পাহাড়!
শেষরাতে যবে বিশ্বপ্রভুর দিই সাড়া আমি ডাকে,
আমার আঁখি প্রশান্ত হয়ে মহাপ্রেমাশ্রু ঢাকে!
বক্ষে আমার মিষ্টতা আসে, মধুর চেয়েও দামি,-
নিরুপম হয়ে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে, বেনামি হয়েও তা নামি!
.... সেখ আজমাইল
১৬/১২/২০২২, কলিকাতা - ১৪৪, শুক্রবার