بسم الله الرحمن الرحیم

চর্যাপদ হয়ে মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণবপদাবলী থেকে প্রাক-আধুনিক ও আধুনিক সহ নানান বিবর্তনধারায় বাংলা সাহিত্যের কাব্যশাখার বিকাশ ঘটেছে ৷ বাংলা ছন্দেরও এই সময় কালে হয়েছে বিরাট পরীক্ষা-নিরীক্ষা ৷ প্রকৃত অর্থে রবীন্দ্রনাথের সময়-কাল-ই বাংলা-কাব্য-ছন্দের স্বর্ণযুগ ৷ তাঁর সময়ে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর-ই দেখানো পথে হেঁটেছেন ছন্দের রাজ্যে ৷ সত্যেন্দ্র' বাবু সংস্কৃত ছন্দের আদলে অসংখ্য কাব্যরীতির প্রচলন করেছেন 'গুরু' —এর স্থলে বদ্ধদল ব্যবহার করে বাংলা কাব্যে ৷ গোলাম মোস্তফা, কাজী নজরুল সহ অনেকেই আরবি, ফারসি, সংস্কৃতির অনুসরণে বাংলাতে চর্চা করেছেন ৷ উল্লেখ্য যে, আধুনিক মাত্রাবৃত্ত রবীন্দ্রনাথের দান ৷ যাক, আমি এই প্রবন্ধে বাংলা ছন্দোশাস্ত্র বা তার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছি না ৷ আমার আলোচ্য বিষয় "তোটক" নিয়ে৷ তোটক হলো সংস্কৃত থেকে বাংলাতে প্রবেশ করা একটি কাব্যরীতি ৷ তোটক কবিতা রচনার পদ্ধতি দুই ভাবে হতে পারে৷ (ক) লঘু-গুরু পদ্ধতিতে৷ (খ) মুক্তদল-বদ্ধদল পদ্ধতিতে ৷ বাংলা ভাষায় যেহেতু বর্ণের দীর্ঘ উচ্চারণ প্রায় নেই বললেই চলে তাই, আমরা মুক্তদল-বদ্ধদল পদ্ধতিতে-ই তোটকরীতি নিয়ে আলোচনা করবো ৷ লঘু-গুরু বাংলায় কৃত্রিম বলে হালকালে কেউ লেখার চিন্তাও করেন না ৷ তোটকের ঘটনকাঠামো হচ্ছে—

"তা তা ধিন তা তা ধিন তা তা ধিন তা তা ধিন"

অর্থাৎ— (ক) লঘু লঘু গুরু লঘু লঘু গুরু লঘু লঘু গুরু লঘু লঘু গুরু ৷

(খ) মুক্ত মুক্ত বদ্ধ মুক্ত মুক্ত বদ্ধ মুক্ত মুক্ত বদ্ধ মুক্ত মুক্ত বদ্ধ ৷

উদাহরণ:—

শোনো মন দিয়ে ভাই বলি আজ কিছু দুখ,
অচেনার পথে যায় জীবনের বহু সুখ;
চেয়ে রই হতাশায় মরণের দেখি মুখ,
লাগে ভয় কাঁপে বুক আঁধারের দেশে নেয়!

দোলে ফুল ফুলে জল সখীদের নানা ছল,
ওঠে ঢেউ ছুটে কেউ শত চোর বাঁধে দল;
আঘাতের ক্ষত রোজ কেড়ে নেয় মনোবল,
প্রিয়া রয় দূরে খুব, লোকে ওই করে হেয় ৷

("মুক্তদল-বদ্ধদল" নিয়মে লেখা)

যুক্তাক্ষরসমেত লেখার উদাহরণ:—

আমি মুক্তি যে চাই এ ধরায় ওগো সই,
মনে কষ্টকে দিই চাপা, হায় তুমি কই?

("মুক্তদল-বদ্ধদল" নিয়মে লেখা)

* মুক্ত= মুক্তদল, বদ্ধ=বদ্ধদল ৷ লঘু= লঘুদল, গুরু= গুরুদল ৷

আশা করি "তোটক" সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিতে পারলাম সংক্ষিপ্ত পরিসরে ৷ সবার সুস্বাস্থ কামনা করে এখানেই শেষ করছি৷ আল্লাহ হাফিজ ৷