সাহিত্য মনোরঞ্জনের বাহন ৷ মনের কথা, জীবনের কথা, সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনার কথা প্রকাশের বাহন সাহিত্য ৷ সাহিত্য হলো কল্পনাকে বাস্তবে ও বাস্তবকে কল্পনায় এনে কলমের কালিতে কাগজে লিখে ফেলা ৷ সাহিত্যের নানা শাখার মধ্যে কাব্য একটি শাখা ৷ বাংলা কবিতার জন্য দুইটি বিষয় বড়ই গুরুত্বপূর্ণ ৷ ছন্দ এবং অলংকার ৷ ছন্দ শাস্ত্রের চেয়ে অলংকার শাস্ত্র একটু বেশি জটিল ৷ বাংলা কাব্যের প্রাচীনতম নির্দশন হলো চর্যাপদ ৷ চর্যার ভাষা অনেকটা দুর্বোধ্য ৷ এর ভাষাকে সন্ধ্যাভাষা বলা হয় ৷ চর্যাপদের পরের নিদর্শন মঙ্গলকাব্য ৷ এত্তো বড় বড় কাব্য, নানা খণ্ডে বিভক্ত যা পড়তে পড়তে বিরক্তি এসে যায় ৷ এই মঙ্গলকাব্যের পরে আসলো বৈষ্ণব পদাবলী ৷ চর্যাপদ, মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণব পদাবলীর কাব্যিক দিক থেকে সুরের দিক-ই বেশি স্পষ্ট ৷ এগুলো গীতি আকারে গাওয়া হতো ৷ অর্থাৎ আমাদের পূর্বপুরুষদের কবিতা ছিলো গান গাওয়া ৷ এই গান গাওয়াটা প্রাচীন ও মধ্যযুগের প্রায় শেষের দিক পর্যন্ত ৷ কবি 'ভারত চন্দ্র' পর্যন্ত সময়কে মধ্যযুগ ধরা হয়৷ কবি 'ঈশ্বরগুপ্ত' মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের সেতুবন্ধন ৷ বাংলা সাহিত্যের সময় কালকে মোটামুটি তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায় ৷ প্রাচীনযুগ, মধ্যযুগ, আধুনিকযুগ ৷ আধুনিক যুগকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়৷ আধুনিক প্রথম পর্যায়, আধুনিক শেষ পর্যায় বা অতি আধুনিক যুগ ৷ আধুনিক যুগের একটা সময়কে কল্লোল যুগ বলা হয়৷ কল্লোল যুগ মূলত কল্লোল পত্রিকাকে ঘিরে রবীন্দ্রবলয় ভাঙার একটা প্রয়াস৷ কল্লোল পরর্বতিকাল আজকের বাংলা সাহিত্য পর্যন্ত বিস্তৃত ৷ বাংলা সাহিত্যের সুদীর্ঘ এই পরিক্রমাতে কবিতার ছন্দ ও অলংকারে এসেছে অনেক পরিবর্তন ৷ হয়েছে বাংলা কবিতার রূপ ও বৈচিত্রের পরিবর্তন ৷ একটা সময় ছিলো ছন্দের নিয়ম গড়ার প্রচেষ্টা ৷ তারপর ছন্দের নিয়ম মেনে চলার সর্বাত্বক চেষ্টা ৷ এরপরে এলো ছন্দের নিয়ম ভাঙার একটা বিদ্রোহ ৷ অর্থাৎ গদ্য কবিতা লিখার প্রবণতা ৷ বর্তমান কালে নবীন লেখকদের লেখাতে অলংকার বলতে যা পাওয়া যায় তা অনুপ্রাস আর উপমার কিছু ব্যবহার ৷ সচেতন ভাবে অলংকার শাস্ত্র চর্চায় নবীনদের তেমন আগ্রহ নেই ৷ ছন্দ শাস্ত্রে যে তারা চর্চা করে ফাটিয়ে দিচ্ছে বিষয়টা এমন নয় ৷ অতি আধুনিক কবিদের অতি উৎসাহে অনেক নবীনরা গদ্য কবিতার বাজার গরম করে তুলছেন! কবিতা পদ্যে হতে পারে আবার গদ্যেও হতে পারে ৷ কিন্তু কবির জন্য শর্ত হলো ছন্দ ও অলংকার চর্চার মাধ্যমে নিজেকে যোগ্য করে তোলা ৷ বর্তমানে আমরা শিখার চেয়ে লিখছি বেশি, জানার চেয়ে বকছি বেশি ৷ বছর দুই আগের কথা, হঠাৎ আমার এক পরিচিত, কবিতার প্রকার নিয়ে হাজির ৷ তন্ময়, মন্ময় —এর সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ সহ ৷ আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম যে উনি কোনো উদৃতি ছাড়াই লেখাটি দিয়েছেন এবং ভুলভাল প্রচুর রয়েছে তাতে ৷ আমি তার এমন কর্মে বিস্মিত হই এজন্য যে উনি তো এ বিষয়ে তেমন জানেন-ই না তবে কি করে এগুলো লিখলেন ৷ ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক, কারণ অন্যের লেখা নিজে না-শিখেই একটু খ্যাতির আশায় কলম চালিয়ে দিয়েছেন; এই হলো বিষয় ৷ বছর দিন পূর্বে, আরো একজনকে দেখলাম— অসংখ্য কবিতার প্রকারসমূহ লিখার পদ্ধতি নিয়ে হাজির ৷ পড়ে চোখ ছানাবড়া! ভুল-ত্রুটির সাথে অসম্ভব হাস্যকর রকমের কিছু কবিতা-পদ্ধতির সমাহার দেখে ৷ সাথে তার অকৃতজ্ঞতা বোধ-ও আমাকে কষ্ট দিয়েছে; এজন্য যে আমার কাছ থেকে লোকটা অল্পকিছু হলেও শিখলো, ভুলেও কোথাও স্বীকার করলো না ৷ দুই দিন পূর্বে এক পরিচিতজন নক করলো ৷ সে কিছু অভিযোগ তুললো অন্যজনের দিকে ৷ যার দিকে অভিযোগ তুললো সেই ছেলেটাকে আমি চিনি ৷ তার সমস্যা প্রচুর ৷ অন্যের লেখা নিয়ম নিজের নামে চালিয়ে দিয়েই শেষ নয়, তা দিয়ে বই ছাপিয়ে ফেলেছে ভুলভাল ভরা ছন্দের নিয়ম নিয়ে ৷ অনেক বড় বড় লোকদেরও যা ইচ্ছে বলে ফেলে ৷ এই ভাবে অসংখ্য নবীনদের পাতেলামি যা, বলে শেষ করা যাবে না এবং এতে পরচর্চা ছাড়া আর কিছুই হবে না, তাই এসব বলে সময় নষ্ট কারা ঠিক নয় ৷ প্রাস্বরিক রীতিকে গোপন করে এক ব্যক্তি পঞ্চবৃত্তের আবিষ্কারক হয়ে ঢোল পিঠিয়ে গর্বে আকাশে পা-তোলা-ভাব আরম্ভ করলে বিষয়টা নিয়ে খোঁজ করে শত বর্ষ পূর্বের লেখা ও পাঁচ জন ছান্দসিকের আলোচনার নির্যাস দিয়ে একটা প্রবন্ধ লিখলাম "প্রাস্বরিক -এর ছোট্ট বিশ্লেষণ ৷" আশা করি তাতে অসত্য দাবিদারের তল্লিতল্লা শেষ হয়েছে ৷ বর্তমানে বাংলা সাহিত্য রাজনৈতিক ক্ষমতাশীনদের অধীনস্হ হয়ে পড়েছে ৷ পূর্বে যে ছিলো না, বিষয়টা এমন নয় ৷ তবে বর্তমানে প্রভাবটা বেশি৷ এর কারণ হলো— কিছু সাহিত্যিকদের নীতিহীনতা, খ্যাতি বা অর্জনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা সহ সুবিধাভোগ ৷ বাংলা সাহিত্যের উন্নতিকল্পে নবীনদের-ই এগিয়ে আসতে হবে ৷ আমাদের বাংলা সাহিত্যের অতীত বেশ সমৃদ্ধ, বর্তমানকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করার দায়িত্ব এই নবীনদের ওপর-ই পড়ে ৷
—মুহাম্মাদ আশরাফুল ইসলাম
বড়ফেছি, জগন্নাথপুর, সুণনামগঞ্জ, সিলেট৷
তারিখ:— ০৯/১২/২০২১