অক্ষরবৃত্ত:—(পয়ার জাত, মিশ্রকলাবৃত্ত, তানপ্রধান)৷

অক্ষরবৃত্ত ধীরলয় রীতি, প্রাচীন রীতি, গুরুগম্ভীর শব্দের সমাহার থাকে এতে৷
অক্ষরবৃত্তে অন্য দুই বৃত্তের(স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত)মতই মুক্তাক্ষর ১মাত্রা৷ বদ্ধাক্ষর শব্দের প্রথমে ও মধ্যখানে ১মাত্রা কিন্তু শব্দের শেষে হলে ২মাত্রা৷
তবে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে শব্দের প্রথমে ও মধ্যে থাকা বদ্ধাক্ষরে, সেগুলো শেষে বলছি৷

পর্ব— অক্ষরবৃত্তে ৫,৬,৭,৮,৯,১০,১১,১২ মাত্রা পর্যন্ত মূলপর্ব নেয়া যায়৷ সাধারণত জোড় সংখ্যায় পর্ব রাখা হয়৷

উদাহরণ:—
পর্ব বিন্যাস-

ধর্মহীন জ্ঞানপাপী/৮ দাও তুমি জ্ঞান!৬
তোমার কথায় টুটে/৮ যায় মম ধ্যান৷৬

ছিলে সনাতনে তুমি/৮ পরেতে ইসলাম,৬
তারপর নিলে ফের/৮ শয়তানের নাম৷৬

তোমার পরশে হলো/৮ নষ্ট এক ছেলে,৬
বাবা-মার দেয়া নাম-/৮ বদলেই ফেলে৷৬

মাত্রা নির্ণয়:—
ধর্ম= ধর১+মো১ "ধর" বদ্ধাক্ষর আর তা শব্দের প্রথমে আছে তাই ১ মাত্রা, "ম" মুক্তাক্ষর তাই ১মাত্রা, মোট ২মাত্রা৷

দাও=২  বদ্ধাক্ষর আর তা এককবদ্ধাক্ষর তাই দুই মাত্রা (একক বদ্ধাক্ষর সবসময় ২ মাত্রা)

তোমার= তো১+মার২, "তো" মুত্তাক্ষর তাই ১মাত্রা, "মার" বদ্ধাক্ষর আর তা শব্দের শেষে আছে তাই ২মাত্রা, কেনো না অক্ষরবৃত্তের সাধারণ নিয়ম— বদ্ধাক্ষর শব্দের প্রথম ও মধ্যে থাকলে ১মাত্রা কিন্ত শেষে থাকলে ২মাত্রা৷ এখানে— "মার" বদ্ধাক্ষরটি শব্দের শেষে আছে তাই ২মাত্রা৷

প্রশান্ত= প্র১+শান১+তো১ "প্র" মুক্তাক্ষর তাই ১মাত্রা, "শান" বদ্ধাক্ষর ১মাত্রা, কেনো না তা শব্দের মধ্যখানে আছে তাই, "তো" মুক্তাক্ষর তাই ১মাত্রা৷ (যুক্তাক্ষর অক্ষরবৃত্তে একমাত্রা পায়, প্র শা ন্ত৷)

ব্যতিক্রম ৩ টি স্থানে হয়৷
১/ সমাসবদ্ধ পদ,
যেমন— জ্ঞানপাপী= ৪ জ্ঞান+পাপী, তারপর=৪ তার+পর ইত্যাদি৷

২/ নির্দেশক পদ,
  যেমন— জীবনটা= ৪ জীবন+টা, মানুষটি= ৪ মানুষ+টি ইত্যাদি৷

৩/ ক্রিয়াপদ,
  যেমন:- করলো=৩, যাইলাম=৪, বললো=৩ ইত্যাদি৷

ক/ দ্বিরুক্তি,
অনেক ক্ষেত্রে দ্বিরুক্তিতে বদ্ধস্বর শব্দের প্রথমে হলেও দুই মাত্রা পায়৷ যেমন কলকল=৪

খ/ নাম বা জাতিবাচক শব্দ,
উচ্চারণের ওপর ভিত্তি করে অনেক সময় এসব শব্দের বদ্ধস্বর শব্দের প্রথমে বা মধ্যে হলেও দুই মাত্রা ধরা যায়৷

গ/ নিরুপায় হয়ে কখনও কখনও মাত্রা হ্রাস-বৃদ্ধি করতে হয় সংকুচিত ও ব্যাপৃত উচ্চারণে৷

অক্ষর ও মাত্রাবৃত্তে ঐ=২(অই,ওই)মাত্রা এবং
ঔ=২(ওউ, অউ)মাত্রা৷

বিঃদ্রঃ কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমি নিয়ম মানতে হয়, নাহলে তাল কাটে আবার ঢালাও ব্যতিক্রমি ব্যবহার অক্ষরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্তের পার্থক্য থাকবে না, আর ছন্দশাস্ত্রের মূল্যও হারাবে৷ চর্চা ও গবেষণা ছাড়া শুধু ছন্দের নিয়ম দেখে আজ-কাল কিছু লোক পণ্ডিত সেজে যাচ্ছে! তর্ক-ই সার ওদের৷ আবার কিছু লোক লোভের বশে নানান নামে আবিষ্কারক সেজে যাচ্ছে, অতীতকে গোপন করে৷

যেই কবিতায় কোনও একটি ব্যতিক্রমি নিয়ম নেবে সেই কবিতায় ঐ ব্যতিক্রমের সাধারণ নিয়ম নেয়া যাবে না; তবে অতীতের লেখকদের কবিতা থেকে উদাহরণ এনে অনেকেই এ বিষয়ে লম্বা তর্ক জুড়তে পারবেন৷ কবিতার ছন্দ শ্রবণের সাথে সম্পর্কিত, মাত্রার জন্য উচ্চারণ শর্ত, সময়ের ব্যবহারই মাত্রা ঠিক করবে৷

—আশরাফুল ইসলাম
বড়ফেছি, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ, সিলেট৷