মাত্রাবৃত্তে মুক্তাক্ষর এক মাত্রা, বদ্ধাক্ষর সর্বত্র-ই দুই মাত্রা হিসাবে বিবেচিত হয়৷ মাত্রাবৃত্তের লয় মধ্যম, তবে বিলম্বিত লয় বা গতিও বলা হয়৷ স্বরবৃত্তে সাধারণত বদ্ধাক্ষর এক মাত্রা৷ অক্ষরবৃত্তে সাধারণত শব্দের শুরুতে ও মধ্যে বদ্ধাক্ষর এক মাত্রা, শেষে দুই মাত্রা ধরা হয়৷ মাত্রাবৃত্তে বদ্ধাক্ষর শব্দের যেখানেই হোক দুই মাত্রা৷ মুক্তাক্ষর তিন বৃত্তেই এক মাত্রা করে হিসাব করা হয়৷ তবে লঘু-গুরু ছন্দে ভিন্ন কথা৷ মাত্রাবৃত্তে পর্ব ৪,৫,৬,৭ মাত্রা পর্যন্ত মূলপর্ব বা পূর্ণপর্ব হয়৷ এর থেকে বড় পর্বও নেয়া যায়৷
মাত্রাবৃত্তের উদাহরণ:—
অবহেলি | জলধরি | ভৈরব | গর্জন,
প্রণয়ের | ডঙ্কার | ওঙ্কার | তর্জন৷
— কাজী নজরুল ইসলাম
অবহেলি< অ/ব/হে/লি=৪ মাত্রা, (এখানে চারটি অক্ষরই মুক্তাক্ষর)৷
ভৈরব< ভই/রব=৪ মাত্রা (এখানে দুইটি বদ্ধাক্ষর ২x২=৪)৷
গর্জন<গর/জন=৪ মাত্রা ( দুইটি বদ্ধাক্ষর)৷
প্রণয়ের< প্র/ণ/য়ের=৪ (প্র-মুক্তাক্ষর, ণ-মুক্তাক্ষর, য়ের-বদ্ধাক্ষর)৷
ডঙ্কার< ডঙ/কার=৪ (এখানে দুটি বদ্ধাক্ষর)৷
ৈ-কার, ৌ-কার মাত্রাবৃত্তে মাত্রা গণনায় আসে৷ যেমন— বৈ=২(বই), বৌ=২(বউ)৷
ঐ এবং ঔ মাত্রাবৃত্তে দুই মাত্রা করে গণনা করা হয়৷
মাত্রাবৃত্তকে সরল কলাবৃত্ত, কলাবৃত্ত, ধ্বনিপ্রধান ছন্দ, বিস্তারপ্রধান ছন্দ বলা হয়৷
আধুনিক মাত্রবৃত্ত বা নব্য মাত্রাবৃত্ত বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি ছন্দোগুরু, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দান৷ মাত্রাবৃত্তকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি৷ ক) প্রত্ন মাত্রাবৃত্ত বা প্রাচীন মাত্রাবৃত্ত, খ) আধুনিক বা নব্য মাত্রাবৃত্ত৷ বাংলা ভাষার উচ্চারণে দীর্ঘস্বর নেই বললেই চলে তাই প্রত্ন মাত্রাবৃত্তে সংস্কৃত ও প্রাকৃতের অনুসরণে লেখা হলে অনেকটা কৃত্রিম হয়ে ওঠে৷ প্রত্নে রুদ্ধদল ও দীর্ঘস্বর দুই মাত্রা কিন্তু আধুনিক বা নব্য মাত্রাবৃত্তে মুক্তদল সর্বত্র এক মাত্রা আর রুদ্ধদল দুই মাত্রা৷ বাংলা কাব্যে এই আধুনিক মাত্রাবৃত্ত রবীন্দ্রনাথের দান৷ শুধু তাই নয়, কবিগুরু বাংলা সাহিত্যে যুক্তবর্ণের ব্যবহারের যে লালিত্য, মাধুর্য এবং কৌশল দিয়েছেন বিশেষ করে মাত্রাবৃত্তে তা ছান্দসিক মাত্রই জ্ঞাত৷
—আশরাফুল ইসলাম
বড়ফেছি, জগন্নাথপুর, সুনামাগঞ্জ, সিলেট৷