কেবলি দহন নয়, পোড়োজমি নয় সবখানি;
পৃথিবী এখনো জলগর্ভা;
বাড়ছে হলুদ শত-সহস্র পাতায়,
তবু ফুলহীন সন্ধ্যা তার বাঁধেনি কোমর আজো
বীর্যহীন হাতে। শকুনী উড়ছে বটে,
ভেসে যায় তারো বেশি হংসমিথুন--
মুগ্ধ যুগল-ডানায় মেঘলা বিকেলে,
ঊষামুখী মহানন্দার আর্দ্র আকাশে।
সত্য বটে,--
ভেঙে পড়ে নভোমুখী প্রাচীন মিনার,
তথাপি মানুষ ঠাঁইকামী আপন অন্তরে,
পরিতৃপ্ত-- বাবুইয়ের নীড় রচে স্বপনের ডালে।

সকীর্তন ছড়ায় তারা নপুংসক কামুকের
বিষাদের ছায়া, শয়তানের ভ্রষ্টবীর্য,
পঙ্কিল আত্মার বমি-- পূর্ণিমার গায়ে,
দ্যাখো-- আলোকের প্রার্থনায়--
আজো তবু পড়েনিকো সবখানি ছেদ।

ক্ষুধাগর্ভ যে কিশোর বিষণ্ন ভোরের বেলা--
কুড়োয় ডাস্টবিনে,
নির্যাস কি শুধু সেই দুর্গন্ধের মুঠ?
নিরন্ন সন্ধ্যায় তার একমুঠো উপার্জন--
ক্ষুধাতুর জননীর বিপন্ন দু’হাতে দিয়ে--
হয়ে ওঠে নিজগন্ধে আগোচর ফুল;
চেতনা কি নেবে না সুবাস সে-ফুলের গাও ছেনে?

বিনাশী ভাঙনে ভাসে উদাসীন স্রোতের শ্যাওলা
পূর্ব জনপদ,
দুলে ওঠে বর্ণমালা, মুছে যায় স্বরলিপি;
কবিতা কি ভেসে যাওয়া?
ভেসে যাওয়া সবটুকু বসতিবিমুখ?
পুরাতন খুঁটিখড়ে যে কিষাণ তোলে ঘর--
পয়স্তিপলিতে,
আউশের তাতাভাতে ওঠে যে ঢেঁকুর,
আমেনার মাতৃবুকে ফুলে যে বলক,
আমাদের কবিতা কি দাঁড়াবে না সেইখানে
তিষ্টিতে ক্ষণকাল উন্মুল প্রহরে?

একদিন বরেন্দ্রের ভাতের সুঘ্রাণে
সমুদ্র জঙ্গল ভেঙে এসেছিল মুগ্ধপায়ে
তুর্কী-চীন-মগ-আরবি-মঙ্গল-তাতার;
আজো সেই মুগ্ধছাপ গাঙেয় তল্লাটজুড়ে
রয়েছে নিভৃতে; তারাও গিয়েছে নিয়ে--
নকশীকাঁথার বুক, যমুনার প্রেম
মধ্যপ্রাচ্যে, মহাচীনে, আফ্রিকার গহীন অন্তরে--
সঙ্গোপনে বাতি জ্বেলে
অম্লান আজো তা ঝড়ঝঞ্ঝা রুধি।
কবিতা কি যাবে না সেখানে--
খুঁজে নিতে প্রত্নহাতে--
ছন্দগর্ভ পথখানি শিলা-ঘাসে ঢাকা?

কেবল ভোঁ-কাটা ঘু্ড্ডি হয়ে উড়বে কবিতা?
আর আমরা জ্বলবো শুধু
ধার-করা বোধানলে বিষাদ নগরে?
স্তনিত বটপত্রে চৈত্রসাঁঝে বাজে আজো
প্রান্তরের সুর,
কবিতার হাত ধরে--
আমরা যাবো না কেন--- হৃদয় জুড়াতে?