এক
আলোর প্রদীপ হাতে যে-সুমনা দেখিয়েছিল মাইলস্টোনহীন পথ,
রাজপ্রাসাদের ষড়যন্ত্রে তাকে আর পথের সাথি করে নিতে পারিনি।
তারপর কত সে মেহেদি-প্ররোচনা; সেসবের গোড়ায় লোভের গুদাম
দেখে শামুকের মতন গুটিয়ে নিয়েছি। কিন্তু পুরোনো দোষে শেষাবধি
এক পূর্ণকলা চাঁদকে ভালোবেসে দেখি- আমার অন্ধকার মোড়ে তার
দেওয়ার মতো কিছুই নেই; এক রাহুর সঞ্চয়ী হিসাবে সে তার সবটুকু
জোছনা বন্ধক রেখে বসে আছে ভাঙামেঘের উঠোনে; তারপর
জোছনার জন্য উপবাসী থেকেছি রাতের পর রাত। শেষ স্টেশনে
পৌঁছে গেছি- এমনটি মনে করে যখন লাগেজের ভবিষ্যত নিয়ে
ভাবছি-তখন বিপরীত ট্রেন হতে নেমে-আসা তোমার সঙ্গে দেখা।
জানি না কী ছিল তোমার গন্তব্য; পরিচয় হতেই ফেলে দিয়েছো
সঙ্গে বয়ে নিয়ে আসা ভাঁজবদ্ধ চিরকুট। নারী-পুরুষের রেললাইন
ভালোবাসা কিংবা ঘৃণা, প্রেম অথবা বৈরিতার সাইনবোর্ড ঝোলানো
স্টেশন ছাড়া অন্য কোনো ঠিকানায় পৌঁছাতে পারে না- যোগাযোগ-
তত্ত্বের এহেন স্বতঃসিদ্ধ ভেঙে দিতেই আমরা হাঁটতে শুরু করেছি;
দুজনের পায়ের নিচে দুটি সমান্তরাল পথ; স্টেশনের পর স্টেশন
পেরিয়ে যাবো আমরা-আমাদের চোখে চেয়ে হেসে উঠবে দিনশেষের
দিগন্ত; যদি ক্লান্তি এসে পুরাতন ভৃত্যের মতন জড়িয়ে ধরে পা,
অপেক্ষমাণ যাত্রীদের সাথে চা খেয়ে নেবো উন্মুক্ত টি-স্টলে বসে।
আমরা কোনোদিনও বিচ্ছিন্ন হবো না-যেমন হয় নাকো জলে ভেজা রৌদ্রে
পোড়া রেললাইনের দুটি লাইন; আমরা কোনোদিনও উচ্চারণ করবো না
ঐ শব্দটি- লোকে যাকে প্রেম নামে ডাকে-যা এখন অশ্বদের ধর্ষণে
ক্ষয়ে-যাওয়া একটি আধুলির উপমার বেশি কিছু নয়। আর আমাদের
লাগেজ-টিকেটেরও প্রয়োজন হবে নাকো; কারণ, আমরা ওয়েটিং রুমে
ফেলে এসেছি প্রেমের মোড়ক-আঁটা স্বার্থপরতার যাবতীয় লাগেজ।
দুই
এই সেই সোনা মসজিদ-আমাদের পূর্বজনদের প্রেম ও ঘামের সাক্ষী;
ঘুণে-পোকার ঈর্ষা জাগিয়ে তাকে কাটছে দিনরাত-কালের করাত আর
ছদ্মবেশী ইঁদুর; সোতখোয়া নদীপাড়ের মতন কখন যে ভেঙে পড়ে!
দ্যাখো-এইখানে স্বর্গীয় ছায়ায় শুয়ে একাত্তরের তিতুমীর- যাকে ভালো-
বেসে বরণ করে নিতে আন্ধাসা আর পানি হাতে প্রস্তুত ছিল শহরের
যুবক-যুবতী। আমরা আরো উত্তরে যেতে পারতাম; কিন্তু রবীন্দ্রনাথের
প্রার্থনার বিপরীতে বিভাজিত বিশ্বাস টেনে দিয়েছে কাঁটাতারের বেড়া;
ফলে আমাদের জ্ঞান মুক্ত নয়-ক্ষদ্রতায় খণ্ডিত ভালোবাসার ধরণী।
অগত্যা আমাদেরও ফেরাতে হলো মুখ; এই যে পথে পথে বাগানের
ছায়া-এই ছায়ায় বসে জিরিয়েছিলেন তুর্কি সেনাপতি আর তাঁর ঘর্মাক্ত
ঘোড়াটি; আমের গাছ শাখা হেলিয়ে দিয়েছিল প্রশ্রয়ী ছায়া আর ল্যাংড়ার
স্বাদ। মহানন্দার আয়নায় তৃষ্ণার্ত চোখ পড়তেই তার বিস্ময়-মুগ্ধতা:
বাংলায় প্রবেশের পথ খোলা কিন্তু বেরুনোর পথে মায়ের চোখ-প্রিয়ার
ঠোঁট হয়ে বহুবিধ বাধার ইশারা! আপন মাংসে হরিণীও বৈরী; তেমনি
মিঠাপানিমন্দ্রিত সবুজের সচ্ছলতায় আমাদের আমকাঁঠালের উঠোন।
তবে সর্বজনীন কোলের আদরে দূরাগত দামালও হয়েছে সুবাধ্য সন্তান;
শ্যামল নারীর বশ মেনে চিরতরে হয়ে গেছে বদ্বীপনিবাসী। আমাদের রক্ত
তাই মিশ্রিত-মেঘনার জলের মতন সাম্য আর শ্যামলিমার আশ্চর্য দ্রবণ।
তিন
আমরা এখন নাটোরে–এই যে প্রাসাদ-এর সাথে জড়িয়ে
আছে রানি ভবানীর নাম। কত বন্যা, কত তাপ, কত মারী!
শাসকের বুকে প্রেম থাকা চাই; শাসক হলে জননীমনা,
সে শুধু মানুষ নয়, হয়ে ওঠে মানুষেরও বাড়া। ভবানীও
ছায়াময়ী প্রকৃতির অন্য এক নাম। সবুজের সূর্য ঘিরে নৈশ
ষড়যন্ত্র বিস্তারিত হলে, সূর্যপ্রেমী সৈন্যের পাশে এগিয়ে
আসেন ভবানী। বিস্মৃতির হাত মুছে দেয় এইসব গৌরব-
স্মারক; এই সেই দিঘি–এই সেই ঘাট—এসো না হয় বসি
কিছুক্ষণ; এই ঘাটে বসে কতদিন ভেবেছেন রানি- কী করে
রুখতে হবে সূর্যগ্রাসী আগ্রাসন, কীভাবে উঠবে বেঁচে এদেশের
চাষি। ঠিকই বলেছো—নাটোর মানে বনলতার নামে রচিত
কবিতার বিস্তারিত বাগান। না, তার কোনও স্মৃতিচিহ্ন নেই:
না প্রাসাদ, না পর্ণকুটির; তবু নাটোর মানেই আজ বনলতা সেন
যেমন আকাশ মানে কবিতার খাতা। এখানে তার চুলের স্মৃতি
নিয়ে আসে রাত; বাতাসে দোলে তার চোখের উপমা আম-
কাঁঠালের ছায়ায়। কোনো নিভৃত সাঁঝে হয়তো এসেছেন কবি
মাথায় নিয়ে সাতটি তারার তিমির; হয়তোবা কখনোই আসেননি
তিনি- আসবেন না কোনোদিনও আর; তবু আজ নাটোর মানেই
কবিদের বনলতা সেনময় প্রিয় তীর্থভূমি যেমন চিঠি মানে
সুমনা বুঝতো আমাদের ভালোবাসার কবুল-জবাবের খসড়া!
চার
কথায় কথায় আমরা এসে গেছি পাহাড়পুর। পাহাড় নেই,
পর্বত নেই; আছে শুধু পাহাড়সমান অতীতের সোনালি গৌরব।
এখানে এলেই ঘাড় হতে নেমে যায় বোঝা; যখন দিনের আসনে
অন্ধকারের পা, তখন এখানেই জ্বলে উঠেছিল নাক্ষত্রিক দীপের
মশাল; বাতিওয়ালার দল সে মশাল হাতে পাড়ি দিয়েছিল
অসীমিত জল-বক্ষে নিয়ে উর্বরতার উপাদান যেভাবে মেঘমালা
ছুটে যায় দেশ-দেশান্তর। সে আলোয় উদ্ভাসিত তারা; অথচ
আমাদের চোখে আজ আঁধারের গুঁড়ো ছিটোয় উত্তরের হাওয়া
এবং আপনাবিস্মৃতি! দ্যাখো- মন্দিরের পায়ের নিচেই পায়ের
পাতার মতো সমতলভূমি; এখানেই ছিল সেই নদী আর সে
গন্ধেশ্বরীর ঘাট; আহাঁটু উদোম পা ছড়িয়ে সন্ধ্যাবতী কতদিন
বসেছেন এই ঘাটে! কোন্ শ্রমণের প্রেম নগ্নপায়ে চুমু খেয়ে
কুসুমের ঘ্রাণ হলো—–সেকথায় মুখরিত আজও সত্যপীরের ভিটা-
একদিন মুখরোচক হাওয়ায় সুমনাকে ঘিরে যেমন লতিয়ে উঠেছিল
আমার বদনাম! সেই নদী আজ শুকিয়ে উধাও–যেমন উধাও সবুজ
ভূগোল থেকে বাঁশের কেল্লার ছাপ! অথবা যেমন মেইল ব্যাগে
খুঁজে পাবে নাকো আর নীলখামে হেসে ওঠা সেই প্রাণের বর্ণমালা।
পাঁচ
আমরা যেখানে এসে দাঁড়ায়েছি এখন-তার নাম চলনবিল; সাগরদুহিতা
তাই জেনেছিলো ধর্ম মানে চলা; পরঘরে রেখে মা গেলে দক্ষিণে,
সূর্য এসেই নতুন নামে ডেকেছিল; তখন থেকেই তার সংসারে পথচলা।
তারপর কতদিন বেহুলার পা ধুয়ে দিয়ে হেসেছে আর শীতল
পাখায় ঘুম দিয়ে জেগেছে জলদস্যুর রাত, কত সোনালি বিকেলে
যে তার বুকে ডোঙ্গা ভাসিয়েছে শবরপাদ, গুনগুনানি উচ্চকিত হলে
গুঞ্জার মালা হাতে তা শুনেছে শবরী ভাবাক আর অলখে ভিজেছে
কার্পাসিকা-জোছনা এলে এসকল কথায় আজো মুখরিত বটতলা।
বেণী রায়-সময় শরীরের ভাঁজে ভাঁজে রেখে গেছে বঞ্চনার ছাপ,
নিঃস্ব আঁচল; তবু সে আঁচলে বাঁধা আজও আত্রাইকরতোয়া-স্নেহ।
দ্যাখো, শিমুল ফোটায় ছেদ নেই; বিস্তারিত সেই পুঁড়ির ক্ষেতও;
অথচ পানের বরজে গা ঢেকে জ্যেষ্ঠপোলা সেই যে দক্ষিণমুখ হলো-
হাটের ডামাডোলে তার গলাটাও কানে আসে না। আর কুয়াশা-
চাদরে ঢেকে আছে কৈবর্তযুবার মুখ; শুধু গুটিকয় শবর-শবরী চিনার
চাষটা ফেলে জাল বোনে সভ্যতার; তবুও তার সজল জন্মদিনে শ্রাবণ-
পূর্ণিমা ফিরে এলে, ঢেউয়ের হাত ধরে জলসংগীতে নাচে মৎস্যকুমারী
সুমনার জন্মদিনে যেভাবে নেচে ওঠে আমাদের ফেলে-আসা-দিন!
ছয়
চলনবিলের চাতাল ছাড়িয়ে আমরা এসেছি প্রত্নরাজপথ; পথের পাশে
ছিল সদানীরার পাড়—স্রোত ছিল আঁকাবাঁকা; বাতাসে উতলা ছিল
শাল্মলী বৃক্ষের মিছিল; এই যে আজকের সুরম্য শহর-একদিন এখানেই
গড়ে উঠেছিল সভ্যতার মাতৃঘর পুণ্ড্রনগর-সেদিনের অন্ধকার পৃথিবীর
লাইট হাউস। রামচরিতের কবি এসে নেমেছিলো এখানেই-তার কাছে
বাংলা-মায়ের হাতে খড়ি—স্বরে অ স্বরে আ ই ঈ। পুবদিকে এগুলেই
বেহুলার ভিটা-সর্বজয়ী প্রণয়ের প্রত্নরঙা বিস্ময়-স্মারক; সময়ের মতো
ইতিহাসের হাত ধরে উত্তরে সরে গেছে নদী; কলার মান্দাস নেই;
নেই কোনো সপ্তডিঙা; মানুষের মুখে মুখে তবু সেই প্রেমগাঁথা বেঁচে
আছে আজো -জননীর বুকের মাঝে যেভাবে বেঁচে থাকে হারানো-সন্তান।
শবরীর হাতে রাঁধা ভাত আর মাছ আর মৃত্তিকার মান্না পুঁড়িগুড়ের
পায়েস-আহা! তৃপ্ত চীনা অতিথিও; অনার্যের বীরত্বের সাক্ষী সদানীরা;
তবুও হায় মাৎস্যন্যায়! অতঃপর গোপালের সোনালি সুদিন। পশ্চিমে
‘বিভেদের বৈদিক আগুন’ ডেকে আনে তুর্কিদের সাম্যের বিজয়; সে-সূত্রে
পুণ্ড্রবাসী নতুন অধ্যায়ে রাখে পা -আর সদানীরা হয়ে যায় মুগ্ধ করতোয়া।
সাত
দ্যাখো-আমরা পার হয়ে এসেছি যমুনা- পা ঠেকেছে প্রাচীন
এক নগরীর ধ্বংসাবশেষে। মাটি খুঁড়ে তোলা কোনো নামহারা
সভ্যতার ধূসর কঙ্কাল; এই লোহা, এই ব্রোঞ্জ-এই যে পাথর-
এসবই সে যুগের জ্ঞানের ফসল: বিস্তারিত নদী ছিল-সমুদ্রও
সুদূরে ছিল না। অনেক বছর আগে এ শহর ছিল প্রেম-প্রাণের
ঠিকানা; কিছুটা পিছিয়ে হয়তোবা তারা ছিল প্রস্তরযুগের মেধা;
সত্য তবু- শুধুই শিকারি নয়,- সদাগর ছিল তারা- আর ছিল
মৃত্তিকার ব্যবহারে দক্ষ কারিগর; চোখ বুজে দ্যাখো- শহরের
কোলঘেঁষা বিস্তীর্ণ বন্দরে শরতের সোনালি প্রভাতে নোঙর
করেছে কত বিদেশি জাহাজ; মাল নিয়ে আবার দিয়েছে পাড়ি
সুদূরের রোমান সাম্রাজ্য কিংবা স্বল্পদূরের শ্যামদেশ; রাতের
তারারা দিনের ইশারা হয়ে হেসেছে আকাশে। এ যুগের
বিশ্ববাণিজ্য তবে অভিনব নয়–যেমন নতুন নই আমি-তুমি
অথবা সুমনা। হয়তো ছিল না বাঁধা -বিধিনিষেধের এত বালাই
ছিল না- প্রিয় মানুষীকে ভালোবেসে হারিয়ে ফেলেনি কেউ-
যেমনটা হারিয়েছি সমুনাকে আমি! কী ছিল সে শহরের নাম?
এখনো যায়নি জানা, জানা বুঝি যাবে না কখনো। অনুমান?
সেও শক্ত। একান্ত সঞ্চয়টুকু দুঃখমূল হৃদয়ের মতো চেপে
রাখে মৃত্তিকাও; আজকাল শোনা যায় এ নাম-উয়ারী বটেশ্বর; হায়!
আসলে তো উয়ারী ও বটেশ্বর-ঘনপ্রতিবেশি দুুটি সহোদরা গ্রাম!
আট
উয়ারী বটেশ্বর থেকে হাঁটতে হাঁটতে আমরা এসে গেছি ময়নামতির বাড়ি;
কে ছিল ময়না আর কে ছিল সে মতি-কালের পাহারাদার যাদুঘরের পায়ে
মাথা ঠুকেও তার জবাব পাবে না। তারচেয়ে এই দ্যাখো-আধুনিক পথের
পাশে শুয়ে আছে প্রাচীন সভ্যতার আরেক কঙ্কাল-ডাইনোসোর ভেবে সময়
খেয়ে ফেলেছে তার মাংসমজ্জা; আর তার রূপের রোশনাই নিয়ে ইতিহাসের
জলে ডুব মেরে আছে সেদিনের সূর্য; কুয়াকাটার সমুদ্রসৈকতে দাঁড়িয়ে আমরা
অস্তসূর্যের উদয় দেখেছি। ইতিহাসের কি কোনো গঙ্গামতি মোড় নেই? অথচ
সেদিন-সোমপুর বিহারেরও আগে-এইখানে জ্বলে উঠেছিল মাটিবর্তী আলো;
এক নয়-বহু বিদ্যাপীঠে গড়ে ওঠা জ্যোতির্ময় ছায়াপথ! কত ছাত্রী-কত ছাত্র-
আর কত শিক্ষক-পণ্ডিত! এই দ্যাখো-গেরুয়াবরণ ঘরের কাঠামো-এটা ছিল
রূপবান কন্যার বিহার; রাজবাড়ি নয়-বাগানবাড়িও নয়, রূপবানেরই নামে
গড়া বিশ্ববিদ্যালয়; রূপবান ছিল কোনো রাজকন্যা-সুন্দরী-বিদ্যুষী? অবাক
হচ্ছো! হতেই পারো। আর এই দ্যাখো স্বর্ণমুদা-সমুদ্রগুপ্তের অশ্বমেধ পরাক্রম;
আহা, একেবারে খাঁটি! তখন তো জালিয়াতি ছিল না মুদ্রায়, ধোকাবাজি ছিল নাকো
প্রেমে; প্রস্তরযুগের হৃদয় ছিল সবুজের সচ্ছলতায় ভরা শালবনের উপমা আর
মুক্তবায়ুর তুলনা ছিল মন। দ্যাখো কত অলঙ্কার: চুড়ি-দুল-প্রেমের অঙ্গুরি;
কে জানে কোন্ সুন্দরীর আঙুলে ছিল এ আংটি! কিংবা ভিক্ষুর প্রভুদৃষ্টি উপেক্ষা
করে কোন সে যুবা এই আংটি পরিয়ে দিয়েছিল তার ষোড়শী প্রিয়ার হাতে!
তার মানে সুমনার আঙুলে যে আংটি আমি পরিয়ে দিয়েছি আমার প্রথম যৌবনে-
তা আমাদের পূর্বজনদের প্রেমের ধারাবাহিকতা! এই দ্যাখো পাথরের গুটি-
অর্থমূল্য কম নয়-তবে তারও বেশি দামি এসব-যাকে বলে অমূল্য-ইতিহাসের
গ্রান্ডবাজারে: আর এইখানেই ছিল ইতিহাসের স্বপ্নমাখা পট্টিকেরা উজ্জ্বল শহর।
সে শহর-কেমন ছিল- কখন যে ধবংস হয়েছিল-সেটা আজ কল্পনার বিষয়-
আশয়,-যেমনটা আমাদের কাছে আমাদের পৈকদাদার অদেখা-অতীত অস্তিত্ব!
নয়
অনেক তো হাঁটলাম- যদিও আমাদের এ পথ এখনো অনেক বাকি।
আমরা হাঁটছি; অজস্র মানুষ– গায়ের সাথে গা, শ্বাসে শ্বাস, দ্রুত দৃষ্টি;
অথচ আমাদের খেয়াল করে নাকো কেউ। অভ্যাসের বিপরীত
কি না! তুমি হাঁটছো, আমি হাঁটছি, আমাদের পায়ে যে কোনো
ক্লান্তি জমে না-এমনও নয়; অথচ বিশ্রামের কথাও উঠছে না
গন্তব্যের কথা তুলতেও ভুলে যাচ্ছি। আমরা যে গণিত পড়েছি,
অর্থনীতির পাঠ নিয়েছি- সেসব বিদ্যা কোনো কাজে আসছে না-
যেমন আসেনি দেবতাসূতের অর্জিত বিদ্যার বহর। আসলে
যে বিদ্যা ঝুলে থাকে নাকো আহত হাঁটুর নিচে, যে বিদ্যা বিলম্বিত
করে না দ্রুতগামী ট্রেনের চলা–সে-ই প্রকৃত বিদ্যা। অতএব
আমরা একদিন পথিকের অবৈতনিক পাঠশালা হবো-পথে পথে
মোড়ে মোড়ে–এই আনন্দ ছড়িয়ে থাকুক সামনের ভূগোলে।