নদীর ওপারে-- যেখানে প্রবেশ নিষেধ- এমনকি বিবিসি-
সিএনএন-আল জাজিরার সচিত্রসন্ধানী সাংবাদিকের,
যেখানে যেতে মানা তেরেসা-হৃদয় মানবাধিকার কর্মীরও,
দ্যাখো--সেখানে আকাশে উড়ছে গ্রাম-পোড়ানো ধোঁয়ার কুন্ডলি
আর গুলির শব্দ থেকে থেকে মনে করিয়ে দিচ্ছে,- ওখানে
যেখানে একদা রোসাঙ্গ রাজদরবার, মহাকবি আলাওল
প্রেমিককণ্ঠে পাঠ করে শোনাতেন ‘পদ্মাবতী’, সেখানে আজ
‘অহিংসা’ প্রযোজিত গণহত্যা, গণহত্যার বলী কবির অসহায়
উত্তরকুল; আগুনের শিখা, রাইফেলের গুলি আর ছোরার
হিস্ হিস্ রচনা করেছে যে গেরুয়া জাহান্নাম, তাকে
প্রাইভেট পড়ায় গাজায় গর্জনশীল ইসরাইলী অত্যাচার।

সীমান্তঘেঁষা বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকা আমার
পা ছুঁয়ে বয়ে যায় নাফ;
সেই স্রোত, সেই ঢেউ;
তবে ঢেউয়ের যে-গর্জন শুনে অভ্যস্ত তীরবর্তী বৃক্ষের কান,
সোঁ সোঁ ছলাৎ ছলাৎ ,
এ তেমনটি নয়
ঢেউয়ের শব্দে মিশে আছে অসহায় কান্নার শব্দ;
যে-স্রোতে ভেসে যেতে অভ্যস্ত ট্যুরিস্টের প্রমোদতরী
দিনে কিংবা রাতে
এ তেমনটি নয়,
স্রোতে মিশে আছে চোখের জলের লবণ;
কোরালমাছের আঁশটে গন্ধ নয়,
কোনো দারুচিনি দ্বীপের সুবাসও নয়,
কুমিরের নাকে সুড়সুড়ি দিয়ে সামুদ্রিক হাওয়ায়
ঘুরপাক খায় অগণিত লাশের গন্ধ!

আগুন ! আগুন! আগুন! কোথাও নেই বিদ্ধ হাতে
ব্যান্ডেজ নেয়ার আড়াল! পালাও! পালাও! পালাও!
দ্যাখো, স্বজনের লাশ সরিয়ে নদী পার হয়ে আসে
টাটমাডো-উইরাথুর সম্মিলিত হিংস্রতা থেকে
বেঁচে যাওয়া নারী ও শিশু,---
কাঁধে বৃদ্ধ দুএকজন কিশোরও।
তাদের চোখেমুখে আজরাইল-দেখা আতঙ্ক!

হায়, এই আধুনিক ববর্বতা থামানোর নেই কোনো জোট
নেই কোনো সম্মেলন প্রতিরোধ ঘোষণার
জাতিসংঘ- সমকামিতায় আসক্ত হয়ে ভুগছে ধাতুদুর্বলতায়!

একবিংশ শতাব্দীর সভ্যতা জোটবদ্ধ মাৎস্যন্যায়
কিসের আলোকায়ন! কিসের মানবাধিকার!
আজ দাঁতের সাফল্যই বৈধতার একমাত্র ফর্মুলা।


আমার হাতে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র নেই,
জেনোসাইডে আক্রান্ত
মানুষের পক্ষে আমি এক কবি--
জোটহীন ভোটহীন,
নাফের জলে ভাসমান ধর্ষিতা নারী ও শিশুর লাশ ছুঁয়ে,
কাতর বৃদ্ধের অসহায়ত্ব স্পর্শ করে,
আর হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা কিশোরের
শুষ্ক হাহাকারে আমার অশ্রু মিশিয়ে,
হে হিংস্র সভ্যতা,
আমি তোমার বিনাশ কামনা করছি--
তুমি নিপাত যাও!
সভ্যতার পুনর্নিমাণে তোমার ধ্বংস আবশ্যক হয়ে পড়েছে।